মার্কশিট দেওয়ার টাকাটুকুও নেই! রাজ্যের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ প্রাইমারির শিক্ষকদের  

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বিগত কয়েকদিন ধরেই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলাকে কেন্দ্র করে সরগরম রাজ্য রাজনীতি। আর এই দুর্নীতির চক্করেই দিনের পর দিন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাজ্যে। যার ফলে একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থা রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার (Primary School)। এমনিতেই পর্যাপ্ত শিক্ষা পরিকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে বন্ধ হওয়ার জোগাড় রাজ্যের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

 মার্কশিট দেওয়ার টাকাটুকুও নেই প্রাইমারির (Primary School) শিক্ষকদের

এরই মধ্যে আবার বঞ্চনা অভিযোগ উঠছে রাজ্যের প্রাইমারি স্কুলের (Primary School) শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তরফ থেকেও। সম্প্রতি শিক্ষা দফতরের তরফে উচ্চ প্রাথমিক, থেকে শুরু করে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিকে কম্পোজ়িট গ্রান্ট দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এই খাতে প্রাথমিক স্কুলগুলির নাম উল্লেখ করা হয়নি কোথাও। শিক্ষাক সংগঠনগুলির দাবি বিগত এক বছর ধরে এই খাতে তারা কোনো টাকা পায়নি।

এরফলে বর্তমানে প্রাইমারি স্কুলগুলির খরচ চালাতে গিয়ে চিন্তায় ঘুম ওড়ার জোগাড় হয়েছে প্রাথমিক স্কুলের (Primary School) শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। চক-ডাস্টার কেনা থেকে পরীক্ষার খরচ এমনকি পরীক্ষা শেষে পড়ুয়াদের মার্কশিট দেওয়ার টাকা জোগাড় হবে কীভাবে তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন শিককমহল। রাজ্যের প্রায় সর্বত্র এই একই ছবি।

তাছাড়াও নিয়মিত সাফাইয়ের খরচ, কিংবা ইলেকট্রিক বিলসহ দৈনন্দিন কাজের ফাইলপত্র, পড়ুয়াদের হাজিরা খাতা সব মিলিয়ে খরচের বিরাট বোঝা নিয়ে মহা ভাবনায় পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এই ভাবে সরকারি বরাদ্দের টাকা নিয়ে বঞ্চনার মুখে পড়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি, মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের থেকেও এই টাকা প্রাথমিক স্কুলে বেশি দরকার।

এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পড়ুয়াদের কাছ থেকে তাও বেতন  হিসাবে মাথাপিছু ২৪০ টাকা করে নেওয়া হয়। ওই বেতন দিয়ে একটি তহবিলও তৈরি করা যায়। যা দিয়ে স্কুল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস অন্তত কেনা সম্ভব। কিন্তু তাঁদের সেই উপায়-ও নেই। প্রাক্‌-প্রাথমিক (Primary School) থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্পূর্ণ  বিনামূল্যে পড়াশোনা হয়। অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা পুরোপুরি অবৈতনিক। আর এই কারণেই স্কুল চালাতে গিয়ে কার্যত নাজেহাল অবস্থা প্রাইমারির শিক্ষকদের।

আরও পড়ুন: স্কুল চালাব কীভাবে? বরাদ্দের টাকা না পেয়ে অথৈ জলে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা

নিয়ম মেনে এখন বছরে তিন বার পরীক্ষা হয় পড়ুয়াদের। এই তিনটি পরীক্ষর নম্বর একসঙ্গে করে সারা বছরের শেষে ফাইনাল মার্কশিট দেওয়া হয়। কিন্তু এখন অধিকাংশ স্কুলের ভাঁড়ার শূন্য। অবস্থা এমন যে আগামীদিনে পড়ুয়াদের মার্কশিট দেওয়ার টাকাটাও নেই। শিক্ষকদের নিজের টাকায় মার্কশিট কেনা ছাড়া উপায় নেই, কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষকই নিজের টাকা খরচ করে মার্কশিট কিনতে চাইবেন না। তাই বছর শেষে মার্কশিট দেওয়া একপ্রকার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

Primary 1 1

অন্যদিকে বরাদ্দের টাকা না পাঠালেও মনীষীদের জন্মদিন পালন করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা দফতর। এক্ষেত্রেও শিক্ষকরা নিজের পকেটের টাকা দিয়ে মনীষীদের জন্মদিন পালন করেছেন। তবে প্রশ্ন উঠছে এইভাবে চললে আগামী বছরে প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে শুরু করে সরস্বতী পুজো হবে কী করে?

কি প্রতিক্রিয়া শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর? 

কম্পোজ়িট গ্রান্ট-এর টাকা নিয়ে বঞ্চনার অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘রাজ্য ও কেন্দ্র যৌথ ভাবে এই  কম্পোজ়িট গ্রান্টের টাকা দেয়। রাজ্য নিজেদের  ভাগের কম্পোজ়িট গ্রান্টের আংশিক টাকা দিয়ে দিলেও কেন্দ্র এখনও কোনো টাকা দেয়নি। তবে রাজ্য তাদের ভাগের বাকি অংশ দেওয়ার ব্যাপারেও চিন্তা করে দেখবে।’

Anita Dutta
Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

সম্পর্কিত খবর