বাংলা হান্ট ডেস্কঃ তীরে এসে তবে ডুবল তরী? প্রশাসনিক অসহযোগিতায় বন্ধ হচ্ছে নদীয়া জেলার রানাঘাটের (Ranagha) অভিযান সঙ্ঘ পুজো। এবারের পুজোয় ১১২ ফুটের দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে গিনিস বুকে নাম ওঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিল এই পুজো কমিটি। অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমেই দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হচ্ছিল। তবে প্রশাসন তরফে সবুজ সংকেত মেলেনি। এই পুজো নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বোধনেই মায়ের ‘বিসর্জন’
মুখ্যমন্ত্রী আপত্তি জানানোর পরেই প্রশাসন পুজোর অনুমতি না দেওয়ায় পুজো করার অনুমতি চেয়ে উদ্যোক্তারা গিয়েছিল হাইকোর্টে। উদ্যোক্তাদের আবেদনের ভিত্তিতে অনুমতির বিষয়টি জেলাশাসককে পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছিলো কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বৃহস্পতিবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি ছিল। এরই মাঝে পুজো না করার সিদ্ধান্ত নিলেন খোদ উদ্যোক্তারা।
জানা গিয়েছে, আইনি লড়াই লড়ার টাকা নেই উদ্যোক্তাদের কাছে। তাই এবারের পুজো না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। টাকার পাশাপাশি শুধুমাত্র পুজো হবে বলে ৪০ বিঘা জায়গায় গ্রামবাসিরা ফসল না করেই রেখে দিয়েছিলেন। তবে প্রশাসনের চাপে পুজো হল না। কত আশা, কত স্বপ্ন নিয়ে চলছিল প্রস্তুতি। পুজো বন্ধ হওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন গ্রামের মানুষেরা।
রানাঘাটের কামালপুরে ১১২ ফুট দুর্গা মূর্তি তৈরির অনুমতি দেন নি নদিয়ার জেলাশাসক। আগেই জেলাশাসক হাইকোর্টে জানান, বিদ্যুৎ দফতর, দমকল, পুলিশ, বিডিও সহ রানাঘাটের মহকুমা শাসক সকলেও এই পুজোর আবেদন বাতিল করেছেন। রানাঘাট পুলিশ জেলার ধানতলা থানা তরফে জানানো হয়, এত বড় দুর্গা মূর্তি দেখতে প্রচুর মানুষের ভিড় হতে পারে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি রয়েছে।
পাশাপাশি এত বড় মূর্তি হওয়ায় লাইন এবং বিদ্যুতের তারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। ১২ ফুট রাস্তার উপর প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে যা খুবই সংকীর্ণ জায়গা। এছাড়া প্রতিমা বিসর্জনেও ওতো বড় দুর্গামূর্তি নিয়ে যাওয়ায় প্রতিকূলতা রয়েছে। সম্প্রতি এই পুজো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “১১২ ফুটের প্রতিমা দেখতে গিয়েছিলাম কেউ পদপিষ্ট হলে তার দায়িত্ব কে নেবে?”
মমতা আরও বলেছিলেন, “১১২ ফুট কেন ৪১২ ফুটের প্রতিমা হোক, কিন্তু সেই প্রতিমা দেখতে গিয়ে যদি মানুষ মারা যায় তার দায় কে নেবে? ওই পুজোর জায়গায় কি সাধারণ মানুষের এন্ট্রি-এক্সিটের পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে? পুজো করলেই হবে না, দায়িত্বশীল হয়ে পুজো করতে হবে।” ওদিকে হাইকোর্টের এই মামলার আগের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, ‘‘এত বড় মা দুর্গার মূর্তি আগে বাংলার কোথাও হয়নি। এই পুজো হলে এক নতুন নজির গড়বে রানাঘাটের ওই পুজো কমিটি।’’
উদ্যোক্তাদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিম হাইকোর্টে জানিয়েছিলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে ওই ক্লাব দুর্গাপুজো করে আসছে। কোনওবার কোনও সমস্যা হয়নি। এবার এই প্রতিমার দৈর্ঘ্য নজিরবিহীন। বহু পরিশ্রম করা হয়েছে। পুজো দেখতে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিরাও আসতে পারেন। হাইকোর্টের কাছে এই পুজো করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে উদ্যোক্তাদের পক্ষে।
আরও পড়ুন: কথা ছিল না, হঠাৎ ঘোষণা! পুজোর আগেই DA বাড়ল রাজ্য সরকারি কর্মীদের, খুশিতে আত্মহারা সকলে
এর আগে এই মামলার শুনানিতে রাজ্য তরফে ২০১৫ সালে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর উল্লেখ করে বলা হয়েছিল, সে বার দেশপ্রিয় পার্ক ৮৮ ফুটের দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেছিল। যা দেখতে এত পরিমাণে ভিড় হয়েছিল যে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল প্রশাসন। পরে জনপ্লাবনের জেরে প্রতিমা দর্শন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন উদ্যোক্তারা। তাই এক্ষেত্রে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা হোক সেই ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসন। শেষমেষ আর হচ্ছেনা পুজো। আইনি খরচ বহন করার সামর্থ না থাকায় সর্বোপরি প্রশাসনিক অসহযোগিতায় নিজেররাই পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন অভিযান সঙ্ঘ পুজো কমিটি।