LAC-র কাছে নতুন চাল চিনের, অরুণাচল প্রদেশের কাছে এটা কী করছে ড্রাগন? প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারতও

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতের (India) অরুণাচল প্রদেশের কাছে স্থিত লুঞ্জে বিমানঘাঁটির দ্রুত উন্নয়ন শুরু করেছে চিন। এই বিমানঘাঁটি এখন চিনা বিমান বাহিনীর জন্য একটি প্রধান অপারেশন সেন্টারে পরিণত হচ্ছে। যেখানে নতুন বিমান শেল্টার, হ্যাঙ্গার এবং বড় পার্কিং স্পেস তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত একটি সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্র উঠে এসেছে। এদিকে, এই সামগ্রিক বিষয়টি এমন সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে যখন ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আলোচনা চলছে। একই সাথে, ভারতের সেনাপ্রধান ইতিমধ্যেই ড্রাগন সম্পর্কে বলেছেন যে, চিনের সাথে LAC পরিস্থিতি স্থিতিশীল, তবে বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল।

ভারতের চিন্তা বাড়াবে চিন (China):

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, লুঞ্জে বিমানঘাঁটিটি তিব্বতে অবস্থিত। যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,৭০০ মিটার উচ্চতায় রয়েছে। এটি ভারতের (India) তাওয়াংয়ের খুব কাছে অবস্থিত। যাকে চিন “দক্ষিণ তিব্বত” বলে দাবি করে। তাওয়াং কেবল কৌশলগতভাবেই নয়, পাশাপাশি ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিমানঘাঁটি থেকে চিনা বিমান বাহিনী ভারতের সীমান্তের খুব কাছাকাছি কাজ করতে পারে।

What is China doing near Arunachal Pradesh India.

চিনের প্রস্তুতি: জানিয়ে রাখি যে, ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পর লাদাখ এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল প্রধান শিরোনামে থাকলেও, চিনের পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের উপর এই মনোযোগ এখন একটি নতুন দিকের ইঙ্গিত দেয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ইয়াংজিতে (তাওয়াং) সংঘর্ষ এর একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ। গত কয়েক বছরে, চিন LAC-র কাছে হোটান, শিগাতসে এবং নারি গুনসার মতো বেশ কয়েকটি বিমানঘাঁটি আপগ্রেড করেছে। এখন লুঞ্জের দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। যেখানে যুদ্ধবিমান এবং ড্রোনের জন্য শক্তিশালী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। যাতে যেকোনও আক্রমণে সেগুলি নিরাপদে থাকে।এছাড়াও, বিমানঘাঁটিটি আরও বড় করা হচ্ছে। যাতে সেখানে আরও বেশি সংখ্যক বিমান রাখা যায়। এর মধ্যে চিনের স্টিলথ ফাইটার J-20, H-6 বোমারু বিমান এবং দীর্ঘ সময় ধরে উড়তে সক্ষম ড্রোন WZ-7 মোতায়েন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: করে দেখাতে পারেননি আর কোনও ভারতীয়! এবার “বিরাট” রেকর্ড গড়লেন কোহলি, উচ্ছ্বসিত অনুরাগীরা

ভারতের পাল্টা প্রস্তুতি: এদিকে, ভারতও (India) প্রস্তুতির দিক থেকে পিছিয়ে নেই। তেজপুর, চাবুয়া এবং হাশিমারার মতো বিমানঘাঁটিগুলিকে অত্যন্ত অ্যাডভান্স এবং উন্নত করা হচ্ছে। হাশিমারা থেকে উড়ান শুরু করা রাফালে যুদ্ধবিমানগুলি উল্কা ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত সেন্সর দিয়ে সজ্জিত। যা চিনের এই চাপের জবাব দিতে সক্ষম। ভারত (India) তার বিমান বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সীমান্তের কাছে দ্রুত রাস্তা, সেতু এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্মাণ করেছে। এদিকে, শিলিগুড়ি করিডোরের কাছে মোতায়েন করা ভারতের S-400 বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই অঞ্চলকে বিমান আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই চিনা সামরিক ঘাঁটির স্থল দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। কিন্তু তাওয়াং থেকে লুঞ্জের আকাশ দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিট। যার ফলে ভারতীয় প্রতিক্রিয়া সময় চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।

ভুটান, নেপাল এবং কৌশলগত প্রভাব: এদিকে, চিনের এই পদক্ষেপ ভুটান এবং নেপালের জন্য কৌশলগতভাবে উদ্বেগজনকও হতে পারে। কারণ উভয় দেশের সীমান্ত তিব্বতের সাথে সংলগ্ন। এছাড়াও, লুঞ্জে শিলিগুড়ি করিডোরের খুব কাছে অবস্থিত। যা ভারতের “চিকেন নেক” নামেও পরিচিত। এটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিকে ভারতের (India) মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত করে। এই অঞ্চলে যেকোনও ধরণের অস্থিতিশীলতা ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। তবে, এর জন্য ভারত কালাদান প্রকল্পটি সম্পন্ন করার কাজও ত্বরান্বিত করেছে। যা উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিকে সংযুক্ত করার জন্য মায়ানমারের মধ্য দিয়ে একটি বিকল্প পথ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুন: শুরু হতে চলেছে কলিঙ্গ সুপার কাপ! কবে হবে কলকাতা ডার্বি? জানুন পূর্ণাঙ্গ সূচি

চিনের বড় পরিকল্পনা: জানিয়ে রাখি যে, চিনের এই বিমানঘাঁটি সম্প্রসারণ তার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। ঠিক যেমনটি তারা দক্ষিণ চিন সাগরে করেছিল। চিন ধীরে ধীরে সেখানে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করছে। আসলে, রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং “প্রস্তুত থাকার এবং যুদ্ধ জয়ের ক্ষমতা রাখার” প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন এবং লুজে এর একটি উদাহরণ।

ধর্মীয় এবং কৌশলগত দিক: এদিকে, তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের জন্যও তাওয়াং গুরুত্বপূর্ণ। এমন পরিস্থিতিতে, সেখানে চিনের সামরিক সমাবেশ কেবল যুদ্ধের প্রস্তুতিই হতে পারে না, বরং ধর্মীয় রাজনীতিরও অংশ হতে পারে। অর্থাৎ, এটি কেবল একটি বিমানঘাঁটি নয়, বরং কৌশলগত চাপ তৈরির একটি প্রচেষ্টাও বটে।

Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

X