বাংলাহান্ট ডেস্ক : সোশ্যাল মিডিয়া (Bagichay Bulbuli) এক আজব জগৎ। এখানে একবার ভাইরাল হতে পারলেই ‘লাইফ চেঞ্জ’! ফকির থেকে যে কাউকে রাতারাতি রাজা বানিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন নেটিজেনরা। আবার এই সোশ্যাল মিডিয়ারই রয়েছে এক খারাপ দিকও। অনেক সময় মানুষ না জেনেশুনেই ভাইরাল হওয়া বিষয় নিয়ে এমন মাতামাতি করেন যা হয়ে দাঁড়ায় দৃষ্টিকটু। সম্প্রতি ‘বাগিচায় বুলবুলি’ (Bagichay Bulbuli) গানটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এমনি প্রহসন।
‘বাগিচায় বুলবুলি’ (Bagichay Bulbuli) গানের ইতিহাস কী?
সোশ্যাল মিডিয়ার খোঁজখবর রাখেন? তাহলে এটাও জানবেন, এ বছর পুজোয় সবথেকে ভাইরাল গান কী ছিল? সুন্দরীদের শাড়ি পরার ভিডিও থেকে শুরু করে মাটন বিরিয়ানি কিংবা উদ্দাম নাচানাচি, সব রিল ভিডিওতেই কমন ছিল এই গান। ‘বাগিচায় বুলবুলি’ (Bagichay Bulbuli)। কোক স্টুডিও বাংলার এই গান চরম ভাইরাল হয়েছে নেট দুনিয়ার কৃপায়। তবে জানেন কি, এই গানের ইতিহাস কী? কে লিখেছিলেন এই গান? কোন পরিস্থিতিতে লিখেছিলেন?
আরো পড়ুন : অভিনেত্রী থেকে নেত্রী, অপরাজিতা আঢ্যও এবার রাজনীতিতে! কোন দলে যোগ দিচ্ছেন?
গানটি নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি
‘বাগিচায় বুলবুলি’ (Bagichay Bulbuli) গানটি আসলে একটি নজরুল গীতি। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা এই গানটিকেই নতুন রূপ দিয়েছে কোক স্টুডিও বাংলা। এদিকে গানটি ভাইরাল হতেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আরেক তথ্য। বিভিন্ন ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, ছেলে ‘বুলবুল’ এর মৃত্যুর পরেই নাকি এই গান লিখেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সে সময়ে তাঁর কাছে ছিল না টাকা। এই গান লিখেই নাকি অর্থ রোজগার করেছিলেন কবি। সত্যিই কি তাই? না,’বাগিচায় বুলবুলি’ (Bagichay Bulbuli) গানটি নিয়ে যে তথ্য ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তা সম্পূর্ণ ভুল। তাহলে সত্যিটা কী? তা জানতে হলে আগে জানতে হবে এই গানের ইতিহাস।
আরো পড়ুন : ক্যামেরা দেখলেই মুখ ঢাকেন খান পরিবারের এই সদস্য, মন্নতের ভেতর কাকে আড়াল করে রেখেছেন শাহরুখ?
নজরুল কখন লেখেন এই গান
হ্যাঁ, এই গজলের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে বিদ্রোহী কবির ছেলের স্মৃতি। তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ছেলে অরিন্দম খালেদ বুলবুলের অসুস্থতার সময়ে টাকা ছিল না নজরুলের কাছে। চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে রেলগাড়িতে কলকাতায় আসছিলেন তিনি। কলকাতায় একটি পত্রিকার কার্যালয়ে আসার সময়ে গাড়িতে পাওয়া একটি বিজ্ঞাপনের উলটো পিঠে গজলটি লিখেছিলেন কবি। টাকা জোগাড় করার পর নৃপেনকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়কে গজলটি দিয়েছিলেন নজরুল।
ছেলে বুলবুলকে নিয়েই আরো একটি গান রয়েছে নজরুলের। তবে সেই গানের ইতিহাস বড়ই করুণ। মাত্র চার বছর বয়সে মারা যায় নজরুল পুত্র অরিন্দম খালেদ, যাকে ভালোবেসে বুলবুল বলে ডাকতেন কবি। ভাগ্যের এমনি পরিহাস, ছেলেকে কবর দেওয়ার মতো টাকাও ছিল না নজরুলের কাছে। জানা যায়, টাকার আশায় এক প্রকাশকের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তাঁকে বলা হয়, কবিতা লিখে দিলে তবেই মিলবে টাকা। তখন সন্তানহারা বাবার কলম থেকে জন্ম নিয়েছিল এই গান, ‘ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার প্রাণের বুলবুলি’। তবে বর্তমানে অনেকেই এই গানের ইতিহাসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন ‘বাগিচায় বুলবুলি’ গানটি। বিশ্রী পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে নেটপাড়ায়।