বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গত দু’দিন ধরে রীতিমতো ঝড় বৃষ্টি চলছে বাংলায়। তবে সব থেকে বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বজ্রপাত। ইতিমধ্যেই বজ্রপাতের কারণে রাজ্যজুড়ে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৯ জন মানুষের। গত সোমবার মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন ২৭ জন এবং গত কাল বীরভূমে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে রাজ্য এবং কেন্দ্র। তবে এই বড় আতঙ্ক থেকে বাঁচবেন কীভাবে? একটু সচেতন হলেই কিন্তু বজ্রপাতের হাত থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা পাওয়া সম্ভব। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর।
দেখে নিন বজ্রপাতের সময় কি কি করনীয়ঃ
★ আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসে নজর রাখুন। বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকলে বাইরে না বেরোনোই ভালো।
★ ঘনঘন বজ্রপাত হলে নিরাপদে ঘরের ভিতরে থাকুন অথবা উঁচু কোনো যানবাহন ব্যবহার করলে জানলার কাঁচ তুলে দিয়ে ভিতরে বসে থাকুন।
★বজ্রপাত শুরু হলে ধাতব পাইপ, রেলিং ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না। কারণ পাইপ বা রেলিং দ্বারা বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারে।
★কৃষি ক্ষেত্র বা জলাভূমিতে থাকলে দ্রুত নিরাপদ শুকনো জায়গায় ফিরে আসুন। জলাভূমিতে বজ্রপাতের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
★ স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নজরে রাখুন। খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া বাইরে বেরোবেন না।
★ বৈদ্যুতিন সংযোগ রয়েছে এমন সমস্ত মেশিন যেমন টিভি, ফ্রিজ এসময় আনপ্লাগ করে রাখুন। বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ এ সময় বন্ধ রাখাই ভালো।
★ আপনার ঘর বা অফিস বজ্রপাতের সময় নিরাপদ স্থান, তবে মাথায় রাখবেন উইন্ডো ব্লাইন্ড নামিয়ে রাখতে হবে অথবা জানলা দরজা বন্ধ রাখতে হবে।
★ বজ্রপাতের সময় কর্ডলেস বা সেলুলার ফোন ব্যবহার করা নিরাপদ হলেও কর্ড যুক্ত টেলিফোন ব্যবহার করা উচিত নয়। মোবাইল সুইচ অফ রাখাই ভালো।
★ খালি পায়ে এসময় মেঝেতে দাঁড়াবেন না, বদলে ফোমের জুতো ব্যবহার করতে পারেন।
★ ৩০/৩০ থিয়োরি মনে রাখুন। অর্থাৎ প্রথমবার বিদ্যুৎ রেখা দেখার পর ৩০ পর্যন্ত গুনতে থাকুন এর মধ্যে আবার বজ্রপাত হলে বাইরে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়।
★বৈদ্যুতিক খুঁটি বা ধাতব কোন চালার তলায় আশ্রয় নেবেন না। কারণ এতে আপনি বজ্রপাতের সহজ লক্ষ্যে পরিণত হতে পারেন।
★মাটিতে শুয়ে পড়বেন না। বরং তার বদলে উবু হয়ে বসে হাত দিয়ে হাঁটু ঢেকে রাখুন। এতে আপনি অপেক্ষাকৃত একটি ছোট লক্ষ্যে পরিণত হবেন।
★ তালগাছ বা নারকেল গাছ বজ্রপাতের সহজ লক্ষ্য, তাই এ ধরনের গাছের তলায় আশ্রয় নেবেন না। এসময় জঙ্গলে যাওয়া উচিত নয় কারণ বজ্রপাতের সাথে সাথেই অনেক সময় দাবানল তৈরি হতে পারে।
★ উঁচু টিলা বা উঁচু কোন জায়গার মাথায় আশ্রয় নেবেন না। এতে আপনি সহজ লক্ষ্যে পরিণত হন।
ভ্রমণের সময় কি কি করনীয়ঃ
★ বজ্রপাতের সময় যদি আপনি বাইরে থাকেন মোটর সাইকেল বা অন্যান্য কোন যানে আপনাকে ভ্রমণ করতে হয় তাহলে সেই সময় যানবাহন থেকে দূরে থাকুন। কারণ এতে শর্ট সার্কিট সম্ভাবনা থাকে।
★ নদীতে নৌকা চালানোর সময় বজ্রপাত শুরু হলে অবশ্যই জল ছেড়ে যত দ্রুত সম্ভব শুকনো জায়গায় উঠে আসার চেষ্টা করুন।
প্রাথমিক চিকিৎসা :
★দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা বজ্রপাতে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে প্রাণদায়ী হয়ে উঠতে পারে। প্রথমেই আক্রান্ত ব্যক্তির নাড়ি পরীক্ষা করুন।
★আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা হলে মুখ দিয়ে সিপিআর দেওয়ার চেষ্টা করুন। এছাড়া বুকে ছন্দময় চাপ দিতে পারেন।
★ বজ্রপাতের ফলে অনেক সময় হাড় ভাঙা, রক্তপাতজনিত জটিলতা তৈরি হয় এক্ষেত্রে রোগীকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
★দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তি ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
★কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে ১০৭৮ নম্বরে কল করুন। যার জেরে সরকারি তরফে তার কাছে তাড়াতাড়ি সাহায্য পৌঁছাতে পারে।