ভারত কখন আর কীভাবে হয়ে উঠল ‘ইন্ডিয়া”! ৯৯ শতাংশ মানুষই জানেন না এই ইতিহাস

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ G20 সম্মেলনের সময় রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত নৈশভোজের আমন্ত্রণ পত্র নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ভারত (India) শব্দ এবং এর অর্থ নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। বিরোধী নেতারা বলছেন যে ৯ সেপ্টেম্বর G20 নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে ‘প্রেসিডেন্ট অফ ভারত’ লেখা আছে, যেখানে লেখা উচিৎ ‘প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়া’। ‘নামে কি আছে?’ এখন এই বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় জ্ঞানের গঙ্গা বইছে, এমন পরিস্থিতিতে আসুন আপনাদের বলি ভারত কীভাবে ইন্ডিয়া হল?

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষের বিভিন্ন নাম রয়েছে যেমন জম্বুদ্বীপ, আর্যাবর্ত, ভারতখণ্ড, হিমবর্ষ, অজ্ঞানবর্ষ, ভারতবর্ষ, হিন্দ, হিন্দুস্থান এবং ইন্ডিয়া। তবে এর মধ্যে ‘ভারত’ সবচেয়ে বৈধ ও জনপ্রিয় হয়েছে। নামকরণ সংক্রান্ত অনেক বিশ্বাস এবং পার্থক্য শুধুমাত্র ভারত সম্পর্কেই রয়েছে। ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির মতো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম পায় দেশটি।

‘ভারত’ নামের প্রাচীন শিকড় রয়েছে এবং ভারতীয় উপমহাদেশকে বর্ণনা করার জন্য বহু শতাব্দী আগে ভারতীয় গ্রন্থ ও জনশ্রুতিগুলিতে এর ব্যবহার করা হয়েছে। ভারত শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয় যে মহারাজ ভরত এর নামানুসারে দেশটির নামকরণ হয়েছে। অর্থাৎ, এটি মহাভারতের মতো হিন্দু মহাকাব্যে উল্লেখিত মহান সম্রাট ভরতের সাথে যুক্ত। অন্যদিকে, মধ্যযুগের কথা বললে, সিন্ধু উপত্যকা থেকে তুর্কি ও ইরানিরা ভারতে প্রবেশ করেছিল। তিনি তাঁরা স-এর উচ্চারণ ‘হ” করতেন। এই তত্ত্ব অনুসারে তুর্কিরা ভারত ভূখণ্ডের লোকদের হিন্দু বলে অভিহিত করে এবং এইভাবে হিন্দুদের দেশ হিন্দুস্তান নাম পায়।

ঔপনিবেশিক প্রভাবঃ অন্যদিকে, দ্বিতীয় তত্ত্বটি হল যেই সময়ে ব্রিটিশরা ভারতে আসে, তখন দেশটিকে হিন্দুস্তান বলা হত। জানা যায় যে, এই শব্দটি বলতে তাদের সমস্যা হত। তাই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় (প্রায় ১৭৫৭-১৯৪৭) ব্রিটিশরা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশকে ‘ভারত” হিসাবে উল্লেখ করেছিল। যদিও ব্রিটিশ কোম্পানি প্রশাসন রাজকাজের ভাষায় অফিসিয়াল কাজের জন্য নাম হিসেবে ‘ইন্ডিয়া’ ব্যবহার করত।

স্বাধীনতা এবং সংবিধানঃ ১৯৪৭ সালে ভারত যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে, তখন নবগঠিত জাতির সরকারী নাম হিসাবে কোন নামটি গ্রহণ করা উচিৎ সে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ভারতীয় সংবিধান প্রণেতারা এই বিষয়ে আলোচনা করেন। ভারতের ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানে ‘ভারত’ এবং ‘ইন্ডিয়া’ উভয়ই ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ভারতীয় সংবিধানের ১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘ইন্ডিয়া,অর্থাৎ ভারত, রাজ্যগুলির একটি ইউনিয়ন হবে৷’ এই চুক্তিটি উভয় নামের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যকে স্বীকার করেছে।

বছরের পর বছর ধরে ‘ইন্ডিয়া’ একটি সাধারণভাবে ব্যবহৃত নাম হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যেখানে এটি আরও সহজে স্বীকৃত। অন্যদিকে, হিন্দি ও অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় ‘ভারত’-এর ব্যবহার অব্যাহত ছিল।

Avatar
Koushik Dutta

সম্পর্কিত খবর