বরফ দিয়ে করা হত ঠাণ্ডা, ভারতে কবে শুরু হয় AC ট্রেন? অবাক করে দেবে ইতিহাস

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে দেশজুড়ে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ ট্রেনে চেপেই যাতায়াত করেন। এমনকি, যত দিন বাড়ছে ততই যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ট্রেনের। এমতাবস্থায়, ট্রেনের ক্রমবর্ধমান যাত্রীর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেও নজর দেয় রেল (Indian Railways)। ভারতে ট্রেনের সফর শুরু হয়েছিল ১৮৫৩ সালে। তবে, দেশের প্রথম এসি ট্রেন চালু হয় ১৯৩৪ সালে। যেটির নাম ছিল ফ্রন্টিয়ার মেল। সেই সময়ে ওই ট্রেনটি বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাই) থেকে আফগানিস্তানের সীমান্ত পেশোয়ার পর্যন্ত চলত। এমতাবস্থায়, সেই সময়ে এসি কোচগুলিকে যেভাবে ঠাণ্ডা করা হত তা জানলে রীতিমতো অবাক হয়ে যাবেন সকলেই। বর্তমান প্রতিবেদনে এই প্রসঙ্গটি বিস্তারিতভাবে উপস্থাপিত করা হল।

এইভাবেই ঠাণ্ডা হত এসি কোচগুলি: দেশে যখন এসি ট্রেন চালু হয়েছিল তখনও ভারতে এয়ার কন্ডিশনার আসেনি। পাঞ্জাব মেল ​​নামের ট্রেনটিতে প্রথমে এসি কোচ যুক্ত করা হয়। যা শুরু হয়েছিল ১৯২৮ সালে। তারপর ১৯৩৪ সালে সেটির নাম পরিবর্তন করে ফ্রন্টিয়ার মেল ​​করা হয়। মূলত, সেই সময়ে আধুনিক সরঞ্জামের পরিবর্তে, কোচ ঠান্ডা করার জন্য বরফের ব্লক ব্যবহার করা হত। পাশাপাশি, এসি বগির নিচে একটি অংশে রাখা হত বরফ। এছাড়াও বসানো থাকত একটি ফ্যান। যেটির সাহায্যে ঠান্ডা করা হত এসি কোচ।

তবে, বরফ দিয়ে ট্রেনের বগি ঠান্ডা করার বিষয়টি এতটাও সহজ ছিল না। কারণ, সেক্ষেত্রে বারংবার বরফের টুকরো ভর্তি করতে হত। এমতাবস্থায়, প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন পৌঁছলে কর্মীরা তা পরীক্ষা করে দেখতেন। পাশাপাশি, এই কাজের জন্য আলাদা কর্মীরাও ছিলেন। এছাড়াও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোচে ব্লোয়ার বসানো হত। যা চলত ব্যাটারিতে।

খাবার থেকে শুরু করে ছিল বিনোদনের ব্যবস্থাও: প্রাথমিকভাবে এই ট্রেনে ৬ টি বগি ছিল। পাশাপাশি, সবমিলিয়ে ওই ট্রেনে ৪৫০ জন যাতায়াত করতে পারতেন। এদিকে, সেই সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোচও ছিল। এমতাবস্থায়, যাত্রীদের সুবিধার্থে তাঁদের বিনোদনের জন্য সেখানে খাবার, সংবাদপত্র, বই এবং তাস দেওয়া হত। পাশাপাশি, এই ট্রেনটি কখনও লেট না হওয়ার জন্যও পরিচিত ছিল। মূলত, ১৯৩৪ সালে এসি কোচ শুরু করার পর ১১ মাস যাবৎ ট্রেনটি লেট চলায় সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয় এবং ট্রেন চালককে একটি নোটিশও পাঠায়।

9eb7634e32ea01ead85c0a96fbf72afe 62b30b2ad5b2a

৭২ ঘন্টার মধ্যে শেষ হত সফর: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, এই ট্রেনে ব্রিটিশ অফিসার থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামীরাও যাতায়াত করতেন। যেটি দিল্লি, পাঞ্জাব ও লাহোর হয়ে পেশোয়ারে পৌঁছাত। এদিকে, পুরো সফর শেষে করতে ট্রেনটির সময় লাগত প্রায় ৭২ ঘন্টা। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর পাশাপাশি মহাত্মা গান্ধীও এই ঐতিহাসিক ট্রেনে ভ্রমণ করেছিলেন। তবে, স্বাধীনতার পর এই ট্রেনটি মুম্বাই থেকে অমৃতসর পর্যন্ত চলতে শুরু করে। ১৯৯৬ সালে, এটির নাম আবার পরিবর্তন করে গোল্ডেন টেম্পল মেল করা হয়। উল্লেখ্য যে, এই ট্রেনটি লন্ডনের সংবাদপত্র “দ্য টাইমস”-এর কাছ থেকে সেরা ট্রেনের খেতাবও পেয়েছে।


Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর