বাংলা হান্ট ডেস্ক: রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ন্যাটো এবং পশ্চিমী দেশগুলি তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকা, ব্রিটেন, সুইডেন, ও তুরস্কের মত দেশগুলি ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ শুরু করেছে। অন্যদিকে, রাশিয়াও ইউক্রেন সীমান্তে বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক, কামান, অস্ত্রবাহী যানসহ প্রায় এক লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে।
এই বিরোধ নিরসনের জন্য রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র শান্তি বৈঠক করলেও ইউক্রেনে দূতাবাস খালি হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি, দুই দেশই ভেতরে ভেতরে সামরিক ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। এমতাবস্থায়, শীঘ্রই যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞমহল। তবে, এই যুদ্ধে কোন পক্ষ জিতবে তা নিয়েও শুরু হয়েছে প্রশ্নোত্তরের পালা।
২০১৪ সাল থেকে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। ওই বছর রাশিয়া আক্রমণ করে ইউক্রেনের ক্রিমিয়ান উপদ্বীপকে সংযুক্ত করে। সেই সময় ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রুশ সেনাদের রুখতে প্রাণপণে যুদ্ধ করলেও তারা সফল হতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মনোবল অটুট থাকলেও তাদের অস্ত্রের অভাব রয়েছে। এই অস্ত্রের ঘাটতি মেটাতে ন্যাটোর দেশগুলি প্রকাশ্যে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে।
সম্প্রতি আমেরিকা তাদের অনেক যুদ্ধজাহাজ ও অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠিয়েছে। এই অস্ত্রগুলির মধ্যে রয়েছে বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, সশস্ত্র যানবাহন, এবং ট্যাঙ্ক। শুধু তাই নয়, মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এবং গেরিলা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
তবে, ইউক্রেনের তুলনায় সামরিকভাবে এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্স অনুযায়ী, এই দুই দেশেরই সামরিক শক্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ পাওয়া গিয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মোট সৈন্য যথাক্রমে ১১ লক্ষ এবং ২৯ লক্ষ। যাদের মধ্যে ইউক্রেনের সক্রিয় সৈন্য রয়েছে ২ লক্ষ এবং রাশিয়ার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৯ লক্ষ। বাকিরা রয়েছে রিজার্ভ সৈনিকের তালিকায়। এছাড়াও, সামরিক অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধবিমান, সশস্ত্র যানবাহন প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইউক্রেনের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইউক্রেন ঐতিহ্যগতভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। ৩০ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির সময় এটি বর্তমান রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের যুগ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং সামরিক ইউনিট ইউক্রেনের অংশে চলে আসে। ২০১৪ সালে যখন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হন তখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল।
কিন্তু, তাঁকে অপসারণের সাথে সাথেই ইউক্রেনে রাশিয়া বিরোধী সরকার চলে আসে। এর ফলে ইউক্রেনের রুশ-ভাষী অঞ্চলে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারপরেই ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া আক্রমণ করে এবং সংযুক্ত করে। ক্রিমিয়ায় রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহী ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে লড়াইয়ে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।
তবে, বর্তমান যুদ্ধের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন যে, ২০১৪ সাল থেকে, ইউক্রেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক সংস্থা ন্যাটোর সদস্য হতে চায়। এতে রাশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ অনেক বেড়েছে। রাশিয়া চায় না ন্যাটো তার সীমান্তে প্রবেশ করুক। ইউক্রেনের কারণে মার্কিন সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য শত্রু দেশ রাশিয়ার সীমান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। আর এতেই ক্ষুব্ধ তারা।
গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা ক্রমাগত ইউক্রেন সফরে আসছেন। অনেক সময় ইউক্রেন ও রাশিয়া সীমান্তে মার্কিন সেনাদেরও দেখা গেছে। রাশিয়া এটিকে একটি বিশাল হুমকি হিসেবে দেখছে এবং বারবার ইউক্রেনের সাথে উত্তেজনা বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদিও, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রও কিনেছে। এদিকে, রুশ-ভাষী মানুষ ইউক্রেনের জনসংখ্যার প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ। তাই রাশিয়া দাবি করছে যে, ইউক্রেনের ওই মানুষদের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।