বাংলাহান্ট ডেস্কঃ বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতারা ধরেই নিয়েছিলেন যে তাঁরা জিতে গেছেন। কিন্তু প্রচারে ঝড় তুলেও ১০০ আসনের কাছে পৌঁছাতে পারল না গেরুয়া শিবির। কিন্তু কেন এমন হল? এই জানতেই রিপোর্ট তলব করেছিলেন অমিত শাহ। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ চলছে। বাংলায় বিজেপির হারের পিছনে ৬টি কারণকে প্রাধান্য দিয়েছেন বিজেপির নেতারা।
প্রথম কারণ হল, রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কারও নাম না প্রকাশ করা। রাজ্যের বিজেপি নেতারা সভায় গিয়ে কারও একজনের নামে ভোট চাইতে পারেননি। অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদী যতই বলুক না কেন যে বাংলার ভূমিপুত্ররাই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, কিন্তু ওনারা কারও নাম নিতে পারেননি। বিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যোগ্য কোনও প্রার্থীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখাতে পারেনি।
দ্বিতীয়, ধর্মীয় মেরুকরণের পথে হেঁটে বাংলার হিন্দু ভোটারদের এক করতে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়। উল্টে বিজেপিকে হারাতে বাংলার সব ধর্মের মানুষরা এককাট্টা হয়ে ভোট দিয়েছেন। এছাড়াও, বাংলার নেতাদের থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর বেশি ভরসা করেছিল দল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বহিরাগত” ইস্যু তুলে ধরায় এই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়।
তৃতীয়, বিজেপি ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্য স্থির করেছিল। কিন্তু দলের অভিজ্ঞতার তুলনায় সেই লক্ষ্য অনেক বেশি ছিল। এছাড়াও বিজেপির নেতাদের গায়ে লেগে যাওয়া বহিরাগত তকমা ঝেড়ে ফেলতে পাল্টা কিছু দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বাংলার মানুষের আবেগ, ভাষা ও সংস্কৃতি বোঝেননি।
চতুর্থ, বিজেপি মাথায় ছিল যে মুসলিম ভোট একদিকে হলে বিজেপির ঝুলিতে সিংহভাগ হিন্দু ভোট চলে আসবে। কিন্তু, বিজেপির এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। আরেকদিকে, তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়ে তৃণমূল থেকেই দল ভাঙিয়ে নেতাদের দলে নেওয়া বুমেরাং হয়ে গিয়েছে। তারকা প্রার্থীদের মুখ দেখিয়ে ভোট টানতেও ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি।
পঞ্চম, তৃণমূলের থেকে নেতাদের টেনে এনে নিজেদের দল ভারী করায় দলের অন্দরে আদি আর নব্যের বিবাদ চরম আকার নেয়। দলের পুরনো নেতা-কর্মীরা দলবদলু নেতাদের কারণে মাঠে নেমে ভূমিকা পালন করেন নি। আরেকদিকে, বাংলার জনগণও দলবদলের রাজনীতিকে ভালো চোখে দেখেনি। এছাড়াও কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলোকে ইচ্ছেমত কাজ করানো এবং নির্বাচনের সময় দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বারবার তলব করাও ঠিকমতো নেয়নি জনগণ।
ষষ্ঠ, নির্বাচনের আগে পেট্রোল, ডিজেল আর গ্যাসের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি হওয়ায় জনগণের মধ্যে একটা খারাপ প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও প্রতিটি দফায় এত আসন জিতে গেছি বলে দাবি করা বিজেপির মাইন্ডগেমও কাজ করেনি।