কেন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ভেঙে দিয়েছিললেন তাঁর বাঁশি, আর কিভাবেই বা হয়েছিল রাধার মৃত্যু?

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ রাধা (Radha) কৃষ্ণের (Krishna) প্রেমলীলা বাঙালী মনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। মনে করা হয়, রাধাকৃষ্ণের মিলনে জীবাত্মা এবং পরমাত্মার একাত্মকরণ ঘটে। এজন্যই রাধা এবং কৃষ্ণ এই নামদুটিকে কোনভাবেই পৃথক করা সম্ভব নয়।

D9C LDhVUAEcQ9i

বস্তুত উল্লেখ্য, দ্বাদশ শতাব্দীতে কবি জয়দেব তাঁর ‘গীতগোবিন্দ’-র মাধ্যমে রাধাকৃষ্ণের ভালোবাসার যে অপূর্ব ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বাংলা তথা ভারতবাসীর মনে তাঁদের বিষয়ে অমরত্ব লাভ করতে পেরেছে।

ধারণ করা হয়, দ্বাপর যুগে বিষ্ণু শ্রী কৃষ্ণ রূপে জন্ম নেওয়ার কারণেই, মা লক্ষ্মী রাধা রূপে জন্ম গ্রহণ করেন। তবে একথা সকলেই জানেন, যে রাধাকৃষ্ণের ভালোবাসা অমরত্ব লাভ করলেও, তাঁদের প্রেম কিন্তু অসম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু আপনারা কি জানেন, কৃষ্ণকে নিজের জীবনে না পেয়ে শ্রী কৃষ্ণ বিরহে রাধার অন্তিম পরিণতি ঠিক হয়েছিল?

IMG 20190119 173842

ভগবান বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রী কৃষ্ণ বাল্যকাল থেকেই নানান দৈবশক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি মাত্র ৮ বছর বয়সেই তাঁর সর্বোত্তম প্রেয়সী রাধার সাথে প্রথমবার সাক্ষাত করেন। তাঁদের চিরন্তন ভালোবাসার বন্ধন ছিল শ্রী কৃষ্ণের বাঁশি। এই বাঁশির ডাক রাধা কখনই অস্বীকার করতে পারতেন না। তাই তাঁদের ভালোবাসার প্রতীক এই বাঁশিটিকে শ্রী কৃষ্ণ কখনই কাছ ছাড়া করতেন না।

Whatsapp DP Wallpaper Shri Romantic Radha Desktop

এরকম অনেক টুকরো টুকরো ঘটনা থেকেই রাধা কৃষ্ণের শেষবারের মিলনের কথা জানা যায়। সেসময়ে কংসরাজা অর্থাৎ শ্রী কৃষ্ণ এবং বলরামের মামা তাঁদের মথুরায় আমন্ত্রণ জানানোয় বৃন্দাবনে যেন এক শোকের ছায়া নেমে আসে। বৃন্দাবনবাসী তাঁদের প্রিয় গোপালকে কোনভাবেই মথুরায় আমন্ত্রণ রক্ষার্থে যেতে দিতে চাননা। অবশেষে শোকার্ত বৃন্দাবনবাসীর সমর্থন সহযোগে মথুরার উদ্যেশ্যে রওনা দেন শ্রী কৃষ্ণ। তবে তাঁর পূর্বে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর প্রেয়সী রাধার সাথে শেষবারের মত দেখা করেন এবং শেষবারের মত তাঁদের মনের সমস্ত দুঃখকষ্ট ভাগ করে নেন।

1028 radha krishna raslila wallpaper 04 1509772435

রাধার কাছ থেকে শেষবারের মত বিদায় নেওয়ার কালে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কাছে ফিরে আসার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কিন্তু তিনি আর কখনই বৃন্দাবনে ফিরে আসেননি। তবে শ্রী কৃষ্ণ সেখান থেকে বিদায় নিলেও, রাধার মনে চির স্মরণীয় হয়েই ছিলেন।

এই ঘটনার পর রুক্মিণীর সাথে দেখা হয় শ্রী কৃষ্ণের। নিজের অজান্তেই কৃষ্ণকে ভালোবাসতে শুরু করেন রুক্মিণী। নিজের ভালোবাসাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য রুক্মিণী তাঁর ভ্রাতার বিরুদ্ধাচরণ করতেও পিছপা হননা। শ্রী কৃষ্ণকে এক পত্র মারফত তাঁকে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলে, শ্রী কৃষ্ণ তাঁকে নিয়ে গিয়ে বিবাহ করেন। এরপর শ্রী কৃষ্ণ নানা লীলার মাধ্যমে কংসসহ আরও নানান দুষ্টকে হত্যা করেন।

04 1509772020 rasa lila

অন্যদিকে রাধার সংসারিক জীবনের ছন্দ স্বাভাবিক স্রোতে ফিরে এলেও, কৃষ্ণ বিরহে তাঁর সমস্ত মন জুড়ে শ্রী কৃষ্ণই বিরাজ করতে থাকে। স্বামীর প্রতি কর্তব্য পালন করলেও, তাঁর মন পড়ে থাকে শ্রীকৃষ্ণের কাছে। বস্তুত এইভাবে আত্মার মিলন ঘটলেও, বাহ্যিকভাবে তাঁদের জীবন সম্পূর্ণ পৃথক ছন্দে গতিশীল হয়।

এইভাবে চলতে চলতে শ্রী কৃষ্ণের প্রতি ভালোবাসার টান অনুভব করে শেষবারের মত কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে রাধা দ্বারকায় যান। সেখানে যেহেতু তাঁর পরিচয় সম্বন্ধে দ্বারকাবাসী অবগত ছিল না, তাই তিনি কৃষ্ণকে অনুরোধ করেন তাঁকে যেন সেখানেই থাকতে দেওয়া হয়।

04 1509772041 rasa word

প্রাসাদে একজন সাধারণ সেবিকা হিসাবেই থেকে যান রাধা। সেখানে নানারকম কাজকর্মের অছিলায় তিনি শ্রী কৃষ্ণের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেতেন। কিন্তু ক্রমেই তিনি তাঁদের সাক্ষাতের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার অভাব অনুভব করতে থাকেন। রাধা ধারণা করেন, শ্রীকৃষ্ণের সাথে তাঁর পুনরায় বিচ্ছেদ অর্থাৎ বাহ্যিক ব্যবধান হলেই, তাঁদের সম্পর্কের দৃঢ়তা পুনরায় ফিরে আসবে।

এইসময় শ্রী কৃষ্ণ রাধার মনের কথা জানতে পেরে, তাঁর সাথে সাক্ষাতের উদ্দ্যেশ্যে তাঁর সামনে উপস্থিত হন। তিনি রাধাকে তাঁর কাছ থেকে কিছু দাবী জানানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু রাধা তা অস্বীকার করায় তিনি ব্যথিত হন। তবে পরবর্তিতে রাধা শ্রী কৃষ্ণকে বাঁশি বাজানোর অনুরোধ করেন। রাধার অনুরোধেই শ্রী কৃষ্ণ তাঁর বাঁশির সুরে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এই ভাবে দিনরাত বাজতে থাকে বাঁশির সুর।

radha

এই বাঁশির সুরেই রাধা আধ্যাত্মিক রূপ থেকে কৃষ্ণের সাথে বিলিন হয়ে রাধা দেহত্যাগ করেন। নিজের ভালোবাসার মানুষকে চোখের সামনে শেষ হয়ে যাওয়ার দৃশ্য মেনে নিতে পারেননি শ্রী কৃষ্ণ। তাই রাধার অন্তিম সময়ে তিনি তাঁদের ভালোবাসার চিহ্ন স্বরূপ বাঁশিটিকে ভেঙ্গে জঙ্গলে ছুঁড়ে ফেলে দেন। শোনা যায়, এরপর থেকে আর কোনদিন শ্রী কৃষ্ণকে বাঁশি বাজাতে দেখা যায় নি।


Smita Hari

সম্পর্কিত খবর