গান গাওয়ার সময়ে মাথায় থাকত কাশ্মীরি টুপি, মান্না দে-র ট্রেডমার্ক স্টাইলের পেছনের কাহিনিটা জানেন?

বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতীয় সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রদের মধ্যে একজন ছিলেন মান্না দে (Manna Dey)। তিনি ছিলেন বিরল প্রতিভা, যাঁর বিকল্প অদূর ভবিষ্যতেও তৈরি হবে না। প্রবোধ চন্দ্র দে, ডাক নামেই যিনি ছিলেন গোটা দেশে জনপ্রিয়। ৫০-৬০ এর দশকে ভারতীয় সঙ্গীত দুনিয়ায় দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন তিনি। দীর্ঘ সাত দশকের সোনায় বাঁধানো কেরিয়ারে অগুনতি গান উপহার দিয়েছেন তিনি যা ক্লাসিক হয়ে রয়ে গিয়েছে।

মান্না দে, নামটা শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। সে যুগে প্রেম ভাঙা থেকে নতুন প্রেমে পড়া সব রকম পরিস্থিতির জন্যই ছিল তাঁর কোনো না কোনো গান। কফি হাউসের আড্ডা থেকে শুরু করে আমি যামিনী তুমি শশী হে, হিন্দিতে পেয়ার হুয়া ইকরার হুয়া হ্যায়, জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় পহেলি, ইয়ে দোস্তি, এক চতুর নার এর মতো কালজয়ী গান রয়েছে তাঁর ঝুলিতে।

Why did Manna dey always wear kashmiri cap

গান ছাড়াও মান্না দে নামটা শুনলেই আরো যে একটি বিষয়ে মনে আসে সেটা হল তাঁর ট্রেডমার্ক কাশ্মীরি টুপি। গান গাওয়ার সময়ে তাঁর মাথায় দেখা যেত এই টুপি। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সবসময় ওই টুপিটি মাথায় পড়ে থাকতেন কিংবদন্তি গায়ক। ওটাই হয়ে গিয়েছিল ‘মান্না দে স্টাইল’। কিন্তু টুপিটি কেন পরতেন তিনি? তা কি শুধুই কমতে থাকা চুল ঢাকার জন্য নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনো কাহিনি সেটাই বলব এই প্রতিবেদনে।

চোখে চশমা, মাথায় কাশ্মীরি টুপি। হারমোনিয়াম বাজিয়ে বিভোর হয়ে গাইছেন মান্না দে। চোখ বুজলেই ভেসে ওঠে এই চিরপরিচিত ছবি। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, টুপিটা কিন্তু প্রথম থেকেই গায়কের স্টাইলে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এর পেছনে রয়েছে দারুণ একটি কাহিনি।

একবার ডিসেম্বর মাসে কাশ্মীরে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছিলেন মান্না দে। একেই হাড় কাঁপানো শীত, তার উপরে হচ্ছিল তুষারপাত। মঞ্চের উপরে গান গাইবেন কী, মান্না দে কেঁপেই অস্থির। নিজের আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘মঞ্চে ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আমি ভাবছিলাম কীভাবে গান গাইব। একটা গান শুরু করতেই আমি উপলব্ধি করলাম ঠাণ্ডায় এতটাই কাবু হয়ে পড়েছি যে সঠিক ভাবে সুরও লাগাতে পারছি না’।

Why did Manna dey always wear kashmiri cap

শিল্পীর অবস্থা দেখে এগিয়ে আসেন তাঁর এক ভক্ত। একটি কাশ্মীরি টুপি এগিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, টুপিটা পরে নিলে অনেকটা আরাম পাবেন তিনি। সাদরে টুপিটা গ্রহণ করেছিলেন মান্না দে। আত্মজীবনীতে তিনি লেখেন, টুপিটা পরে সত্যিই আরাম পেয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে ফিরে পেয়েছিলেন নিজের আত্মবিশ্বাস। তারপর তাঁর সুরের জাদু ছড়িয়ে পড়েছিল শ্রোতাদের মাঝে।

ওই টুপিটা আর কোনোদিন কাছ ছাড়া করেননি মান্না দে। ভক্তের উপহার চিরদিন নিজের কাছেই শুধু রেখে দেননি, তারপর থেকে যেখানেই গিয়েছেন তাঁর মাথায় দেখা গিয়েছে ওই খয়েরি রঙা কাশ্মীরি টুপি। ওটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল মান্না দে-র ট্রেডমার্ক।

Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর