বাংলাহান্ট ডেস্ক : যাকে বলে একেবারে প্রতিবাদী মহিলা তিনি। পরনে সাধারণ একটা সবুজ শাড়ি, গোলাপি রঙের ব্লাউজ। মুখে বাঁধা মাস্ক। কাঁধে ব্যাগ। মঙ্গলবার দুপুরে খালি পায়েই বেরিয়ে গেলেন জোকা ইএসআই হাসপাতাল চত্বর থেকে। ওই মহিলার পিছনে তখন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা দৌড়চ্ছেন। সাধারণ এক বধূ এমন যে এক কাণ্ড করে বসবেন তা ভাবেন নি কেউ! প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee) লক্ষ করে তাঁর দিকে জুতো ছুঁড়ে মেরেছেন তিনি।
জোকার ইএসআই হাসপাতাল থেকে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়ে তখন বার করা হচ্ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। হঠাৎই তার গাড়ির দিকে ছুটে এল উড়ন্ত এক পাটি জুতো। কয়েক সেকেন্ড পরে আবারও একটা! পার্থের দিক থেকে সবার নজর মুহূর্তের মধ্যে ঘুরে গেল অন্যদিকে। কিন্তু কে এই মহিলা? তিনি কি কোনও চাকরিপ্রার্থী? কী তাঁর পরিচয়? কোন অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতে হঠাৎই এসএসসি দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া পার্থের দিকে জুতো ছুঁড়ে মারলেন?
জানা যাচ্ছে, ওই মহিলার নাম শুভ্রা ঘোড়ুই। তিনি দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার বাসিন্দা। তাঁর মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। প্রাক্তন মন্ত্রীকে জুতো ছোড়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘মালা দিয়ে বরণ করলে কি আপনাদের ভাল লাগত?’ তিনি জানান, আমতলা থেকে জোকা হাসপাতালে এসেছিলেন এক আত্মীয়ের চিকিৎসা করানোর জন্য। ওই আত্মীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জানালেন, তাঁর নিজেরও শরীর খুব খারাপ। তার মধ্যেই হঠাৎ কেন মেজাজ হারিয়ে এমন কাজ করে বসলেন তিনি? শুভ্রা নিজে চাকরিপ্রার্থী কি না তা জানান নি। কিন্তু জানালেন, রাজ্যে এত বেকারের অবস্থা এবং এসএসসি দুর্নীতির ঘটনায় তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ।
পার্থকে জুতো ছুড়ে শুভ্রা বলতে থাকেন, ‘ওঁকে জুতো মারতেই এসেছিলাম। জুতো মেরে এখন খালি পায়ে বাড়ি যাব।’ কেন ছুড়লেন জুতো জোড়া? তখনই শুভ্রার পাল্টা প্রশ্ন, ‘কী জন্য জুতো মেরেছি তা আপনারা জানেন না? কত গরিব মানুষের টাকা… কোটি কোটি টাকা নিয়ে ফ্ল্যাট কিনছে!’ এখানেই থামেননি শুভ্রা। মাস্ক ঠিক করে আঙুল তুলে তাঁর মন্তব্য, ‘এসি গাড়ি চড়িয়ে হুইল চেয়ারে করে ঘোরাচ্ছেন (পার্থকে)! গলায় দড়ি দিয়ে টানতে টানতে নিয়ে যান। আমি আরও খুশি হতাম, ওই জুতোটা যদি ওঁর টাকে লাগলে।’
ভিড় বাড়তেই শুভ্রা জানান, তাঁর বাড়ির লোক অসুস্থ। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ওষুধ কিনতে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাকে দয়া করে ছেড়ে দিন। আমি হাই পাওয়ারের ওষুধ খাচ্ছি। সব সময় মাথা ঘুরছে।’ এর পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে খালি পায়েই বাড়ির দিকে হাঁটা দেন জেদি শুভ্রা।