বাংলা হান্ট ডেস্ক: ইরানের (Iran) রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি (Ebrahim Raisi) হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। ইরানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রান্তে পূর্ব আজারবাইজানের পাহাড়ি এলাকায় রাইসির হেলিকপ্টারটি নিখোঁজ হয়। হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর সত্যতা সমগ্ৰ বিশ্বের সামনে উপস্থাপিত হয়। এদিকে, ওই মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় রাইসি সহ আরও ৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানও। এদিকে, রাইসির মৃত্যুর পর সমগ্ৰ ইরানে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর চেয়ার ঢেকে দেওয়া হয়েছে কালো কাপড়ে।
কালো রঙ এবং রাইসি: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, রাইসিকে প্রায়ই কালো রঙের পোশাক এবং কালো পাগড়ি পরতে দেখা যেত। এখন রাইসির মৃত্যুর পর তাঁর চেয়ারটিও কালো কাপড়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা আপনাদের কাছে এই বিষয়টি তুলে ধরব যে ঠিক কোন কারণে ইব্রাহিম রাইসি কালো রঙের পোশাক এবং কালো পাগড়ি পরতেন? চলুন, জেনে নিই সেই সম্পর্কে।
কট্টরপন্থী নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পান: ইব্রাহিম রাইসি একজন কট্টরপন্থী নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। মসজিদের ইমামের পাশাপাশি তিনি আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেছেন। এরপর তিনি রাজনীতিতে আসেন। রাইসির পাগড়ি এবং পোশাক সম্পর্কে কথা বলার আগে, এটি জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ইরানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হাশেমি রাফসানজানি এবং হাসান রুহানি সাদা পাগড়ি পরতেন। এদিকে, অন্য দুই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, আলী খামেনি এবং মোহাম্মদ খাতামি কালো পাগড়ি পরতেন। তবে ইব্রাহিম রাইসির কালো পাগড়ি পরার ক্ষেত্রে সামান্য পার্থক্য ছিল। এই পার্থক্য ছিল এক ডিগ্রির কারণে।
ইব্রাহিম রাইসি ও আয়াতুল্লাহর ডিগ্রি: মূলত, ইব্রাহিম রাইসি ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি আয়াতুল্লাহর ডিগ্রি নিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হন। এদিকে, অন্যদের কাছে হোজাত আল-ইসলামের ডিগ্রি ছিল। এখানে উল্ল্যেখযোগ্য বিষয় হল, আয়াতুল্লাহর ডিগ্রি এক ধরণের পোস্ট-ডক্টরাল ডিগ্রি। আয়াতুল্লাহর ডিগ্রি পেতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মের তুলনামূলক অধ্যয়ন, ধর্মের নিয়মকানুন এবং যেকোনো একটি বিষয়ে বিশেষ যোগ্যতা থাকতে হয়। এই সমস্ত অধ্যয়ন করার পরে, একজন আয়াতুল্লাহর ডিগ্রি পান। যা ইব্রাহিম রাইসির ছিল।
আরও পড়ুন: হয়ে যান নিশ্চিন্ত! হায়দ্রাবাদকে হেলায় হারাবে KKR, এই তথ্য সামনে আসতেই খুশি অনুরাগীরা
এটাই সবচেয়ে বড় পার্থক্য: আয়াতুল্লাহ শিয়া মুসলমানদের ডিগ্রি। যাঁরা আয়াতুল্লাহর ডিগ্রি পাচ্ছেন তাঁদের একটি বিশেষ ড্রেস কোড রয়েছে। সেই ড্রেস কোডে একটি কালো পাগড়ি এবং একটি কালো পোশাক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এদিকে, যাঁরা আয়াতুল্লাহর ডিগ্রি অর্জন করেন তাঁরা সাদা পোশাকও পরেন। এমতাবস্থায় আয়াতুল্লাহর ডিগ্রিতে সাদা এবং কালো রঙের পোশাকের পার্থক্য হল যাঁরা ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা নবী মোহাম্মদের পরিবার থেকে এসেছেন তারা কালো পোশাক পরেন এবং বাকিরা সাদা পোশাক পরেন। ইব্রাহিম রাইসির কালো পাগড়ি নির্দেশ করে যে তিনি সরাসরি নবী মোহাম্মদের সাথে সম্পর্কিত। আর সেই কারণেই ইরানের মন্ত্রিসভার সদস্যরা রাইসির মৃত্যুর পর তাঁর চেয়ার কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেন।
আরও পড়ুন: সফর হবে আরও সহজ! ১৮ ঘন্টার ভ্রমণ শেষ হবে ৭ ঘন্টায়, তৈরি হচ্ছে দেশের আরও একটি এক্সপ্রেসওয়ে
সারা বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে: জানিয়ে রাখি যে, ইব্রাহিম রাইসির বয়স যখন মাত্র ৫ বছর তখন তাঁর বাবা মারা যান। তিনি ২০২১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এদিকে, ১৯৮৮ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের শেষের দিকে, হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দীর গণহত্যার ঘটনায় তিনি সারা বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রাইসিকে আমেরিকা নিষিদ্ধ করেছিল। ইব্রাহিম রাইসি ১৯৬০ সালে ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং শিয়া মুসলমানদের একটি পবিত্র তীর্থস্থান মাশহাদে জন্মগ্রহণ করেন।