বাংলা হান্ট ডেস্ক: “পুরী” (Puri), এই শব্দটি শুনলেই সবার প্রথমে যে দু’টি বিষয় মাথায় আসে সেগুলি হল সমুদ্র এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির (Jagannath Temple)। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে তাই এই “ডেস্টিনেশন” পছন্দের তালিকায় একদম প্রথম দিকে থাকে। এদিকে, আর মাত্র কয়েকটা দিন পরেই মহাসমারোহে সম্পন্ন হতে চলেছে রথযাত্রা। আর এই উৎসব মানেই রীতিমতো সেজে ওঠে সমগ্ৰ পুরী।
পাশাপাশি, জগন্নাথদেবের রথযাত্রাকে প্রত্যক্ষ করার জন্য সেখানে লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগমও ঘটে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, যুগ যুগ ধরেই পুরীর মন্দিরের নানান “অলৌকিক” ঘটনা আকৃষ্ট করে মানুষকে। শুধু তাই নয়, কথিত আছে পুরীর মন্দিরে এমন কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটে যায় যার সঠিক উত্তর বিজ্ঞানের কাছেও নেই।
মূলত, পুরীতে অবস্থিত এই মন্দিরে ভগবান বিষ্ণুর একটি রূপ শ্রী জগন্নাথ হিসেবে পুজো করা হয়। এমতাবস্থায়, এই মন্দিরের অন্যতম আকর্ষণ হল মন্দিরের শীর্ষে থাকা ধ্বজাটি। কারণ, এই ধ্বজা সর্বদা বাতাসের বিপরীত দিকে ওড়ে। হ্যাঁ, জেনে অবাক হয়ে গেলেও এটা কিন্তু একদমই সত্যি।
শুধু তাই নয়, মন্দিরের চূড়োয় থাকা এই ধ্বজা প্রতিদিন পরিবর্তনও করা হয়। এই রেশই চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, যদি একদিনের জন্যও মন্দিরের পতাকা তথা ধ্বজাটি বদলানো না হয়, সেক্ষেত্রে ১৮ বছর বন্ধ থাকবে মন্দির। এমতাবস্থায়, মন্দিরের মাথায় ধ্বজা ওড়ানো ও পুরোনো ধ্বজাকে নামিয়ে আনার অভিনব কৌশল প্রত্যক্ষ করতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান মন্দিরে।
কেন বাতাসের উল্টোপথে উড়তে দেখা যায় ধ্বজাকে: এই প্রসঙ্গে একটি পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। হিন্দু ধর্মমত অনুযায়ী, মন্দিরের ধ্বজার এইভাবে ওড়ার কারণের পেছনে রয়েছে ভগবান হনুমানের যোগ। কাহিনি অনুযায়ী, মন্দিরের একদম কাছে থাকা সমুদ্রের শব্দের কারণে ভগবান জগন্নাথের বিশ্রাম নিতে সমস্যা হয়। এমতাবস্থায় ভগবান হনুমান এই বিষয়টি জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ সমুদ্রকে তার গর্জন বন্ধ করতে বলেন।
যদিও, ভগবান হনুমানকে সমুদ্র জানান, এই শব্দে তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অর্থাৎ, বাতাসের গতি যতদূর থাকবে ঠিক ততদূর সমুদ্রের শব্দ পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি, ভগবান হনুমানকে তিনি তাঁর পিতা পবনদেবের কাছে এর জন্য অনুরোধ জানাতে বলেন। এমতাবস্থায়, হনুমান পবনদেবকে বিষয়টি জানান এবং মন্দিরের দিকে বাতাস যাতে না যায় সেজন্য অনুরোধ জানান।
তবে, পুত্রের কথার জবাবে পবনদেব জানিয়ে দেন যে, এমন ঘটনা কার্যত অসম্ভব। যদিও, পবনদেব ভগবান হনুমানকে একটি সমাধানের সূত্র জানান। সেই পরামর্শ অনুসারে, ভগবান হনুমান তাঁর শক্তি দিয়ে নিজেকে দু’টি ভাগে ভাগ করে বাতাসের চেয়ে দ্রুত গতিতে মন্দিরের চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করেন। যার ফলে সেখানে এমন বায়ুচক্র তৈরি হয় যে, সমুদ্রের শব্দ আর মন্দিরের ভিতরে না গিয়ে বরং তা মন্দিরের চারপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকে।
এই কারণেই পুরীর মন্দিরের খুব কাছে সমুদ্র থাকা সত্বেও সেই আওয়াজ মন্দিরের ভিতরে শোনা যায় না। এর ফলে আরামে নিদ্রায় যেতে পারেন ভগবান জগন্নাথ। বিশ্বাস করা হয় যে, এই কারণে মন্দিরের পতাকাও বাতাসের বিপরীত দিকে উড়তে থাকে।