বাংলাহান্ট ডেস্ক : ভারত! এই একটা নামই এখন বিশ্বে সর্বত্র আলোচিত। তা সে ইন্দোনেশিয়ার জি২০ সামিট হোক বা রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধে (Russia – Eukraine War) শান্তি প্রতিষ্ঠা, ভারতকে পাশে চাইছে প্রত্যেকটি পশ্চিমি রাষ্ট্রই। আর রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক আজকের নয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বহুবার ভারতকে আন্তর্জাতিক সমস্যায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। ৭১ সালের যুদ্ধে আমেরিকা-ব্রিটেনের যৌথ নৌবহরের সামনে ভারত মহাসাগরের বুকে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় এই রাশিয়াই। এবার সেই রাশিয়াই পড়েছে উভয় সংকটে। আন্তর্জাতিক স্তরে কার্যত কোণঠাসা অবস্থা তার। আর এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে চাই ভারতের সাহায্যই।
ভারতের একাধিপত্য : ভারতের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি যথেষ্ট ঈর্ষনীয়। জি২০ সম্মেলনে জো বাইডেন থেকে জাস্টিন ট্রুডোর মতো রাষ্ট্রনায়করা নিজে এসে হাত মিলিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি সমর্থন না পেয়েও, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদমির জেলেনস্কি রাষ্ট্রসংঘে জোড়ালো সওয়াল করেছেন নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্য হিসাবে স্থান পাওয়া নিয়ে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে ভারত দেদার তেল কিনেছে রাশিয়া থেকে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে বসে মার্কিন নীতির সরাসরি সমালোচনা করার সাহস দেখিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। আন্তর্জাতিক স্তরে এহেন একাধিপত্য দেখানো রাষ্ট্রকে রাশিয়া যে পাশে চাইবে তা বলাই বাহুল্য।
অর্থনৈতিক সাহায্য : আন্তর্জাতিক সুসম্পর্কে সবার প্রথমেই আসে অর্থনৈতিক স্বার্থ। বলা যায় ভারত এবং রাশিয়া দুটি দেশই বাণিজ্যনীতিকে আরও সুদৃঢ় করতে বদ্ধ পরিকর। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে পশ্চিমি দুনিয়া একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাশিয়ার উপর। সেই নিষেধাজ্ঞাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। পেট্রোলিয়াম সহ ৪১টি পণ্য রাশিয়া থেকে আমদানি করার আশ্বাস দিয়েছে নয়াদিল্লি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর সম্প্রতি রাশিয়া সফরে যান। সেই সময় তাঁর হাতে ১০টি কাঁচামালের তালিকা তুলে দেয় মস্কো। রাশিয়া এই ১০টি কাঁচামাল ভারত থেকে সরবরাহের অনুমতি চায়। এবং এই দাবিতে স্বীকৃতিও দেয় ভারত। এছাড়া রাশিয়া ঘোষণা করে ভারতে সরবরাহকৃত কৃষিজ সারের আমদানি তারা বাড়িয়েছে প্রায় ৭.৬ শতাংশ।
ভারতের কূটনৈতিক চাল : কূটনৈতিক ভাবেও বর্তমানে ভারতের কাছে যথেষ্ট সুবিধা পাচ্ছে রাশিয়া। ইউক্রেনের উপর সামরিক অভিযানের জেরে প্রায় গোটা বিশ্বই রাশিয়ার সমালোচনা করলেও বিরত থেকেছে ভারত। একাধিক বার শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি জানালেও সরাসরি রাশিয়ার সমালোচনা কখনই করেনি নয়া দিল্লি। একবার আন্তর্জাতিক স্তরে বিদেশমন্ত্রী জয়শংকরকে প্রশ্ন করা হয়, ইউক্রেন – রাশিয়া যুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারত কেন এগিয়ে আসছে না? তখন তিনি জানান, ‘এটা রাশিয়ার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে অনেকগুলি বিষয় রয়েছে, যেগুলির সমাধান না হলে ভারত কখনোই যুদ্ধ পরিসমাপ্তিতে এগিয়ে যাবে না।’ যদিও এর পরই রাশিয়া পরমাণু হামলার হুমকি দিলে রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করেছে ভারতই। জি২০ সামিটের মঞ্চ থেকে ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপদেশ, ‘এটা যুদ্ধের সময় নয়। করোনা পরবর্তী সময়ে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে।’ এই মন্তব্য প্রশংসা কুড়িয়েছে গোটা বিশ্বের। আপ্লূত হয়েছে ইউক্রেনও। সর্বোপরি বলা যায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তো বটেই, কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও নরেন্দ্র মোদি এবং এস জয়শংকরের ভারতকে নিতান্তই প্রয়োজন ভ্লাদিমির পুতিনের। তাই বারবার রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির গলায় নরেন্দ্র মোদি এবং ভারতের সুনাম শোনা যাচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।