বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের নয়া রাজ্যপাল (Governor) সিভি আনন্দ বোস (CV Ananda Bose)। ছেলেবেলা থেকেই বাংলার প্ৰতি প্রবল ঝোঁক তার। বাংলা ভাষায় লিখতে চান গোটা একখানা বইও। এবার বাংলা ভাষা শেখার লক্ষ্যে আজ সরস্বতী পুজোর দিন রাজভবনে তার হাতেখড়ির অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে রাজ্য তরফে। স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উপস্থিতিতেই হচ্ছে সেই বিশেষ অনুষ্ঠান।
অন্যদিকে, বিষয় নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চৰ্চা। এদিনের সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকেও (Suvendu Adhikari)। তবে ‘হাই প্রোফাইল হাতেখড়ি’ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন না শিশির পূত্র। অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার কারণ তুলে ফেসবুকে করলেন লম্বা-চওড়া পোস্টও। ঠিক কি লিখলেন বিরোধী দলনেতা?
নিজের ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মহামান্য রাজ্যপাল ডক্টর সি. ভি. আনন্দ বোস একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক। একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা হিসেবে তিনি ওনার কর্মজীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য বহু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং প্রশংসায় ভূষিত হয়েছেন। উনি একজন সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক এবং একজন সুবক্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি একাধিক ভাষায় অনেক বই লিখেছেন। মহামান্য রাজ্যপাল পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হয়ে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করতে চাইছেন, তাই তিনি বাংলা ভাষা শেখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ওনার এই আকাঙ্ক্ষা অত্যন্ত প্ৰশংসনীয়।’
এরপর বিস্ফোরক অভিযোগ করে তিনি লেখেন, ‘তবে মহামান্য রাজ্যপাল মহোদয়ের এই ইচ্ছাকে রাজ্য সরকার সুচতুর ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে কোনো দ্বিধাবোধ করেননি। শ্রীমতি নন্দিনী চক্রবর্তী (আইএএস) মহোদয়া; যিনি মাননীয় রাজ্যপালের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি, উনি রাজ্য সরকারের ‘বিশেষ’ দূত হিসাবে কাজ করতে সিদ্ধহস্ত। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডা কে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে রাজ্যপালের কার্যালয়কে সুচতুর ভাবে ব্যবহার করেছেন মাননীয় রাজ্যপালের ইচ্ছাপূরণের অছিলায়।’
পাশাপাশি তিনি এও বলেন ‘এই অনুষ্ঠান এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে যখন পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার কর্তা ব্যক্তিরা “কারাগারে বন্দি”। যে সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থার কারবারিরা কারাগারে স্থান পায় সেই সরকারের আয়োজিত এই অনুষ্ঠান নিজেদের গায়ে লেগে থাকা কলঙ্ক মোছার চেষ্টা মাত্র। তাই আমার মনে হয় দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের এই অনুষ্ঠান রাজভবনের মর্যাদা ও মহামান্য রাজ্যপালের পদমর্যাদার গরিমাকে বৃদ্ধি করবে না।’
শুভেন্দুর সংযোজন, ‘এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি প্রায়শঃই রাজভবন ও মহামান্য রাজ্যপাল মহোদয়ের প্রতি অযৌক্তিক এবং অসম্মানজনক মতামত প্রকাশ করেছেন, কখনো রাজ্যপালের পদ বিলুপ্ত করার কথা বলেছেন, আবার কখনো রাজ্যপাল কে বিশ্ববিদ্যালয় গুলির উপাচার্য পদ থেকে সরানোর প্রয়াস চালিয়ে নিজে সেই পদে আসীন হতে চেয়েছেন। ওনার নাকের ডগায় পর্বত সম দুর্নীতি ঘটানো হয়েছে আর উনি কিছুই টের পাননি তা অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর। ওনার সমর্থনে আজও হাজারো শিক্ষত মেধাবী বেকার পথে বসে, এবং বাংলার পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যত ধ্বংস করতে অযোগ্য প্রার্থীদের বস্তা বস্তা টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।’
‘হাতে খড়ি অনুষ্ঠান হলো এক শুভ সূচনা জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে, কিন্তু যিনি প্রধান অতিথি তিনি আবার না ওনার সঞ্চিত নীতি নৈতিকতা হীন জ্ঞানের ঝাঁপি খুলে বসে দুর্নীতির পাঠ পড়িয়ে দেন, তাই পশ্চিমবঙ্গের করদাতাদের টাকা খরচ করে এমন একটি অনুপযুক্ত ও হাস্যকর পরিস্থিতির সাক্ষী হতে পারবো না বলে অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রইলাম।,