বাংলা হান্ট ডেস্কঃ স্বামীহারা বিধবা বৌদি আত্মীয় হলেও, পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন না। সম্প্রতি একটি মামলায় এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিচারপতি শুভেন্দু সামন্ত (Justice Subhendu Samanta) এই নির্দেশ দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই তা নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা।
কোন মামলায় এই নির্দেশ দিল হাইকোর্ট (Calcutta High Court)?
জানা যাচ্ছে, বিচারপতি সামন্তর এজলাসে রেশন ডিলারের লাইসেন্স (Ration Dealer License) সম্বন্ধিত একটি মামলার শুনানি চলছিল। হাওড়ার শ্যামপুর থানার রাধানগর এলাকা নিবাসী দূর্বারানি হাজরার নামে একটি রেশন ডিলারের লাইসেন্স ছিল। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর তিনি প্রয়াত হন। এরপর ‘কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডে’ ওই রেশন ডিলারের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ২০২১ সালের শুরুতে আর্জি জানান দূর্বারানির বড় ছেলে সোমনাথ।
তবে সেই আবেদনের যাচাই পর্ব সম্পন্ন হওয়ার আগেই ওই বছরের ১০ জুন প্রয়াত হন সোমনাথও। এরপর পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের থেকে ‘এনওসি’ নিয়ে ওই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন দূর্বারানির ছোট ছেলে নবীনসুন্দর। সেই অনুযায়ী উলুবেড়িয়ার সাব ডিভিশনাল কন্ট্রোলার আবেদনের শুনানি করেন। সেখানেই দেওর নবীনসুন্দরের নামে লাইসেন্স মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে মৌখিক আপত্তি জানান সোমনাথের স্ত্রী।
আরও পড়ুনঃ মাত্র ৫০০ টাকায় মিলবে LPG সিলিন্ডার! দুর্দান্ত প্রকল্প নিয়ে এল রাজ্য! কারা সুবিধা পাবেন?
শেষ অবধি নবীনসুন্দরকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। কারণ জানা যাচ্ছে, পরিবারের কোনও সদস্য অথবা উত্তরাধিকারীর যদি আপত্তি থাকে, তাহলে ‘কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডে’ রেশন লাইসেন্স মেলে না। এরপর জল গড়ায় কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) অবধি। উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন দূর্বারানির ছোট ছেলে নবীনসুন্দর।
বিচারপতি শুভেন্দু সামন্তর এজলাসে এই মামলার শুনানি চলাকালীন নবীনসুন্দরের আইনজীবী সুশান্ত পাল দাবি করেন, এক্ষেত্রে সোমনাথের স্ত্রীয়ের আপত্তি আইনত গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডে’ লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য নির্ধারণ করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আইন আছে। সংশ্লিষ্ট আইনের ২(এম) ধারা বলছে, কোনও ব্যক্তির পরিবারের সদস্য অথবা উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে।
এক্ষেত্রে আইনত দত্তক নেওয়া সন্তান এবং ডিভোর্সি অথবা বিধবা মেয়েও (সেই ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল) পরিবারের সদস্য অথবা উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্বামীহারা বৌমা কখনও পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন না। সেই কারণে ‘কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডে’ রেশন ডিলারের (Ration Dealer) লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে নবীনসুন্দরের আবেদনের ক্ষেত্রে তাঁর বৌদির আপত্তির কোনও গুরুত্ব নেই।
আরও পড়ুনঃ গোটা মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ! কারা জড়িত? ৮ এপ্রিল যা হতে চলেছে…
তবে এক্ষেত্রে আরও একটি দিক রয়েছে, যে ব্যক্তির উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করা হচ্ছে, তাঁর মৃত্যুর আগে যদি তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়, তাহলে বিধবা পুত্রবধূ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উত্তরাধিকারী অথবা পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাই আইনের সবদিক যাচাই করার পর কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, এক্ষেত্রে দূর্বারানি হাজরার মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে প্রয়াত হয়েছেন। সেই কারণে সোমনাথের স্ত্রী আত্মীয় হলেও, পরিবারের সদস্য নন।
এরপরেই হাইকোর্ট (Calcutta High Court) জানায়, ‘কমপ্যাশনেট গ্রাউন্ডে’ রেশন ডিলারের লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে নবীনসুন্দরের আর্জি ফের বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে দু’সপ্তাহের ‘ডেডলাইন’ বেঁধে দিয়েছেন বিচারপতি। ওই সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।