বাংলা হান্ট ডেস্কঃ স্বামীর খুনের বদলা নিতে রাতারাতি আইন নিজের হাত তুলে নিচ্ছেন স্ত্রী। টানটান উত্তেজনায় ভরপুর এমন ঘটনা সাধারণত আমরা গল্পের বই কিংবা সিনেমার পর্দাতেই দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু শুনতে অবাক লাগলেও সম্প্রতি বাস্তব জীবনেও ঠিক এমন কান্ডটিই ঘটিয়েছেন পাকিস্তানের উপজাতি অঞ্চল বাজৌরির বাসিন্দা এক মহিলা। জানা গিয়েছে হত্যাকারী ওই মহিলার নাম কাশ্মীর বিবি। বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন ওই মহিলা।
তবে পুলিশি জেরায় সমস্ত ঘটনা নিজে মুখে স্বীকার করে নেওয়ার পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন স্বামীর খুনীকে হত্যা করে তার বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। আসলে মহিলা গোটা ঘটনাটাই অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা মাফিক রীতিমতো ছক কষে ঘটিয়েছেন ।
ঘটনার সূত্রপাত হয় আজ থেকে তিন বছর আগে। জানা গিয়েছে সেইসময় প্রয়াত হন ওই মহিলার প্রথম স্বামী শাহ জামিন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিয়ে সেসময় ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ছাড়ার পাত্রী নন কাশ্মীর বিবিও। তাই স্বামীর মৃত্যুর কারণ জানতে সেসময় একেবারে উঠেপড়ে লাগেন তিনি। নিজের মতো করেই শুরু করেন তদন্ত।
আর তদন্তে নেমেই কিছুদিনের মধ্যেই তার হাতে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার মাধ্যমে তিনি জানতে তার স্বামীর মৃত্যু মোটেই স্বাভাবিক নয়। তার ইনজেকশনে বিষ মিশিয়ে তাকে হত্যা করেছিল তার স্বামীরই বন্ধু গুলিস্তান খান। ব্যাস সেই দিন থেকেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন স্বামীর খুনের বদলা নিতে তিনি নিজেই হত্যা করবেন গুলিস্তান কে।
এরপর টানা পাঁচ-ছয় মাস ধরে তিনি নানাভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে বিফল হচ্ছিলেন। শেষমেশ তিনি ঠিক করেন প্ল্যান করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন । তাই সেই প্ল্যান অনুযায়ী প্রথমে, গুলিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব করে তার কাছাকাছি আসেন। সেসময় সে জানতে পারে গুলিস্তান আগে থেকেই বিবাহিত এবং তার একটি পুত্র সন্তান আছে। এরপর সে গুলিস্তান কে অর্থ সম্পত্তি ইত্যাদির টোপ দিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর তারা একসাথে থাকতে শুরু করে।
এসবের মধ্যেই একদিন ওই মহিলা গুলিস্তান কে বলেন নিজেদের সুরক্ষার কথা ভেবে তাদের কাছে একটা পিস্তল থাকার দরকার। এরপর গুলিস্তান বাড়িতে একটা পিস্তল কিনে রাখে। এরপর রাতে গুলিস্তান ঘুমিয়ে পড়তেই নিজের পরিকল্পনা কে বাস্তব রূপ দেওয়ার কাজে লেগে পড়েন ওই মহিলা। পিস্তলে গুলি না থাকায় প্রথমবার তিনি ব্যার্থ হলেও পরে আবার পিস্তলে গুলি ভরে প্রথমে গুলিস্তানের মাথায় এবং পরে শরীরের ডান দিকে গুলি চালিয়েছিলেন তিনি।
এরপর সারারাত গুলিস্তানের মৃত দেহের পাশে ঠাঁই বসেছিলেন তিনি। এরপর সকাল হতেই প্রতিবেশীদের মিথ্যে গল্প সাজিয়ে বলেছিলেন অচেনা কেউ এসে তার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে পুলিশি তদন্তের জেরে বেরিয়ে পড়ে আসল সত্যি। মহিলা নিজের মুখে পুলিশের কাছে সমস্ত ঘটনা স্বিকার করে নিয়েছেন। তাকে হেফাজতে নেওয়ার পাশাপাশি যে পিস্তল দিয়ে গুলিস্তান কে হত্যা করা হয়েছিল সেটিও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।