বাংলা হান্ট ডেস্ক: কেরালার (Kerala) রাজনীতিতে লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এবং বিশেষ করে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিএম) বর্তমানে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারুভান্নুর সমবায় ব্যাঙ্কের ১৫০ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের মামলা রাজ্য সরকার এবং শাসক দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে পুলিশি তদন্তের ব্যাপারে কেরালা হাইকোর্টের দেওয়া কড়া নির্দেশ এবং ইডির সক্রিয়তা রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন হল আগামী বছর সম্পন্ন হতে চলা কেরালা বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের অবস্থান ঠিক কী হবে?
কেরালার (Kerala) নির্বাচনে কী হবে সিপিএমের:
ঋণ জালিয়াতি; কেরালা (Kerala) হাইকোর্ট কঠোর অবস্থান নিয়েছে: জানিয়ে রাখি যে, কেরালা হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশকে ৩ মাসের মধ্যে ঋণ জালিয়াতির মামলার তদন্ত সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্তভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে। বিচারপতি ডি কে সিং স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, রাজনৈতিক কর্মীদের ভূমিকার বিষয়ে যদি নিরপেক্ষ তদন্ত না হয়, তাহলে তদন্তকারী আধিকারিকদের এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। অর্থাৎ, এই আদেশ কেবল মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের দল সিপিএমের জন্যই এক ধাক্কা নয়, বরং রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক মনোভাব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। ইতিমধ্যেই ইডির দায়ের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রাজ্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, রাজনৈতিক বা আমলাতান্ত্রিক চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে সমস্ত অভিযুক্তের ভূমিকা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করতে হবে। আদালতের এই মন্তব্য সিপিএম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগের গুরুত্বকে স্পষ্ট করে।
পিনারাই বিজয়নের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর সরাসরি প্রভাব পড়েছে: এদিকে, সিপিএমের বিরুদ্ধে কেরালা (Kerala) হাইকোর্টের সর্বশেষ অবস্থান আরও গুরুতর। কারণ বিরোধীরা ইতিমধ্যেই বাম সরকারের সাথে সম্পর্কিত অভিযোগের মামলায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বিরোধিতা করছে। এর ফলে মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নের বিশ্বাসযোগ্যতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিরোধীরা, (বিশেষ করে বিজেপি) ইতিমধ্যেই দুর্নীতির বিষয়টি ক্রমশ উত্থাপন করেছে এবং বিজয়নের পদত্যাগ দাবি করেছে। এমনকি সিনিয়র সিপিএম নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী জি সুধাকরণও তাঁর নিজের সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে খারাপ অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করে তিনি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলও ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছেন।
আরও পড়ুন: মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হতেই বেঙ্গালুরুর মালিকের গায়ে আতসবাজি! চটে লাল পার্থ জিন্দাল
সিপিএমের ওপর বিজেপির আক্রমণাত্মক মনোভাব: কেরালায় (Kerala) শাসক দলের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলিকে বিরোধী দল বিজেপি একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে এবং এই সুযোগকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে কোনও খামতি রাখছে না। ইতিমধ্যেই দলের জাতীয় মুখপাত্র টম ভাদাক্কান এবং রাজ্য সভাপতি ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর দুর্নীতির ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। বিজেপি দাবি করেছে এখন যখন দলের ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, তখন সরকারকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। ২০২৬ সালের গোড়ার দিকে সম্পন্ন হতে চলা কেরালা বিধানসভা নির্বাচনে এই দুর্নীতির অভিযোগগুলিকে একটি বড় ইস্যু করে তোলার কৌশল নিয়ে কাজ করছে বিজেপি।
কেরালায় কংগ্রেসের কী জন্য বড় সুযোগ হবে: উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, গত লোকসভা নির্বাচনে, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (UDF) কেরালায় দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছিল। অন্যদিকে, সিপিএম নেতৃত্বাধীন এলডিএফ আবারও পিছিয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে, এখন যখন এলডিএফ দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ এবং বিজেপি ক্রমাগত তাদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন এই বিষয়টি কংগ্রেসের জন্যও একটি সুযোগ হতে পারে।
আরও পড়ুন: ধোনি অধিনায়ক হতেই তাঁকে “আনফলো” করলেন রুতুরাজ? ব্যাপারটা কী?
কেরালার নির্বাচনে সিপিএমের কী হবে: আসলে কারুভান্নুর ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করেনহাইকোর্টের তিরস্কার এবং ভেতর থেকে উঠে আসা ভিন্নমতের স্বর- এই সমস্ত ঘটনা এলডিএফ এবং বিশেষ করে সিপিএমের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং তাঁর সরকারের ভাবমূর্তি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যা দলের নির্বাচনী সম্ভাবনার জন্য প্রত্যক্ষভাবে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিরোধীরা যদি এই বিষয়গুলি কার্যকরভাবে উত্থাপন করতে থাকে, তাহলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হতে পারে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান: আমরা যদি কেরালার (Kerala) ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে যে ইউডিএফ-এ কংগ্রেস একাই ২০ টি আসনের মধ্যে ১৪ টি জিতেছিল এবং ৩৫.৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এদিকে, এলডিএফ-নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সিপিএম মাত্র ১ টি আসন জিতেছে এবং ২৬.০৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ওই নির্বাচনে, বিজেপি কেরালার রাজনীতিতে তার বিস্তার দেখিয়েছে এবং ১ টি আসন নিয়ে প্রথমবারের মতো তাদের খাতা খুলেছিল এবং ১৬.৮১ শতাংশ ভোট পেয়ে ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্যও গভীর ছাপ রেখেছিল।