বোরখা পরে পায়ে হেঁটেই খাবার ডেলিভারি মহিলার? আসল সত্য জেনে আবেগাপ্লুত নেটিজেনরা

বাংলা হান্ট ডেস্ক: বর্তমান সময়ে যতদিন এগোচ্ছে ততই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে অনলাইন ফুড ডেলিভারি (Online Food Delivery) সংস্থাগুলি। যেগুলির সাহায্যে কয়েক মিনিটেই পছন্দের খাবার পৌঁছে যায় নিজের কাছে। তবে, সাধারণত এই সংস্থাগুলিতে যাঁরা ফুড ডেলিভারির কাজ করেন তাঁরা বাইক বা সাইকেলে চড়েই খাবার ডেলিভারি করতে বেরোন। পাশাপাশি, সংস্থার তরফে দেওয়া একটি নির্দিষ্ট পোশাকও পরতে হয় তাঁদের। কিন্তু, এবার বোরখা পরিহিত এক মহিলাকে একটি জনপ্রিয় ফুড ডেলিভারি সংস্থার ব্যাগ নিয়েই হেঁটে যেতে দেখা গেল।

শুধু তাই নয়, তাঁর এই ছবি ইতিমধ্যেই তুমুল ভাইরাল (Viral) হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে। মূলত, ছবিতে থাকা ওই মহিলাটিকে বোরখা পরিহিত অবস্থায় পিঠে জনপ্রিয় ফুড ডেলিভারি সংস্থার একটি ব্যাগ নিয়ে হেঁটে যেতে দেখেই অবাক হয়েছেন নেটিজেনরা। কারণ, সচরাচর এমন ছবি দেখা যায় না। এমতাবস্থায়, তিনি হেঁটে হেঁটেই খাবার ডেলিভারি করেন কি না সেই প্রশ্নও জেগেছে নেটিজেনদের মনে।

পাশাপাশি, অনেকে আবার ওই মহিলার এহেন কঠোর পরিশ্রমের ছবি দেখে কুর্ণিশও জানিয়েছেন। তবে, সম্প্রতি ওই ছবিটির পেছনে থাকা আসল “সত্যি”-টি সামনে এসেছে। যেটি জানার পর রীতিমতো অবেগাপ্লুত হয়েছেন নেটিজেনরা। জানা গিয়েছে, ছবিটি ভাইরাল হওয়ার কিছুদিন পর ওই মহিলার দেখা পান এক ব্যক্তি। তিনিই ওই মহিলাকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তাঁকে জানান। এমতাবস্থায়, পুরো বিষয়টি জানার পর ওই মহিলা জানান, তিনি কোনো খাবার ডেলিভারি সংস্থার কর্মী নন। বরং, কাজের সুবিধার জন্য একটি পুরোনো জিনিসের দোকান থেকে ৫০ টাকার বিনিময়ে তিনি ওই ব্যাগটি কেনেন। শুধু তাই নয়, ওই ব্যাগটিকে পিঠে নিয়েই কাজের সুবাদে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পথ প্রতিদিন হাঁটতে হয় তাঁকে।

কি জানিয়েছেন তিনি: এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, বছর ৪০-এর রিজওয়ানা সম্প্রতি তাঁর লড়াকু জীবন সংগ্রামের কাহিনিটি সামনে আনেন। লখনউর জনতা নগর কলোনিতে তিন সন্তানকে নিয়ে থাকেন রিজওয়ানা। প্ৰথম থেকেই তাঁর সংসারে নিত্যসঙ্গী ছিল অভাব। এমতাবস্থায়, কয়েকবছর আগেই তাঁর স্বামী হঠাৎই পরিবার ছেড়ে চলে যান। আর তারপর জীবনযুদ্ধ আরও কঠিন হয়ে যায় রিজওয়ানার জন্য। শুধু তাই নয়, সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে তিনি নিজেই রোজগারের জন্য বিভিন্ন কাজ শুরু করেন।

বর্তমানে তিনি একাধিক বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। পাশাপাশি, ওই কাজের পরেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে দৈনন্দিন ব্যবহারের কিছু সামগ্রীও বিক্রি করেন রিজওয়ানা। যার জন্য প্রতিদিন পাইকারি বাজার থেকে স্বল্পমূল্যে ওই জিনিসপত্র কিনে আনতে হয় তাঁকে। তারপর চলে সেগুলির বিক্রির পালা। আর এই পুরো কাজই তিনি করেন পায়ে হেঁটে। যার দরুন তাঁকে রোজই প্রায় ২০-২৫ কিমি পায়ে হেঁটে ঘুরতে হয়। যদিও, নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় কিছুটা সুবিধাও হয়েছে রিজওয়ানার। তাঁর এই লড়াকু জীবন সংগ্রামের কাহিনি জানার পর অনেকেই তাঁর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমতাবস্থায়, তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হল সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর