বাংলাহান্ট ডেস্ক : ধর্না দেওয়া পশ্চিমবঙ্গে নতুন এক ঐতিহ্যে দাঁড়িয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই দেখা যায় প্রেমিক প্রেমিকার বাড়ির সামনে ধর্নায় বসে পড়ছে বিয়ের দাবিতে। তবে এবার ধর্না দিলেন এক স্ত্রী।বাড়িতে রয়েছে চার সন্তান। তাঁদের ফেলেই পালিয়েছেন স্বামী৷ এমনকী তিনি পালিয়ে গিয়ে আরেকটি বিয়ে করেছেন বলেও অভিযোগ৷ এই অবস্থায় চার পুত্র সন্তানকে নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে ধর্নায় বসলেন স্ত্রী৷
তাঁর অভিযোগ, বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ির অকথ্য অত্যাচারও সইতে হয় তাঁকে৷ এর আগে একাধিকবার থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন৷ কিন্তু তাতে লাভের লাভ কিছুই হয়নি৷ পুলিশ অভিযোগই নেয়নি৷ অবশেষে ধর্নাকেই প্রতিবাদের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছেন তিনি৷ স্বামীকে গ্রেফতার করতে হবে এই দাবিতে বুধবার সবং থানার সামনে চার সন্তানকে নিয়ে শুরু মফুজা বিবির ধর্না৷ তিনি চান, স্বামীকে গ্রেফতার করে যেন উপযুক্ত শাস্তি দেয় পুলিশ৷
জানা গিয়েছে, ১৫ বছর আগে সবং থানার অন্তর্গত তিন নম্বর দণ্ডরা অঞ্চলের বাসিন্দা শেখ মহম্মদ আলি জিন্নার সঙ্গে বিয়ে হয় পিংলার কলিকাকুণ্ডু এলাকার বাসিন্দা মফুজা খাতুনের। বিয়ের পর সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল৷ কিছু দিন পর থেকেই শুরু হয় অত্যাচার৷ যত দিন যায় সেই অত্যাচারের মাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ মাস খানেক আগে স্ত্রী ও সন্তানদের ছেড়ে চলে যায় জিন্না। তবে জানা যাচ্ছে সময় মতো বাড়িতে টাকা পয়সা পাঠিয়ে দিত ঠিকই৷ শেষ দু’মাস হল সংসারে টাকা পাঠানোও বন্ধ করে দিয়েছে জিন্না৷
এর মধ্যে একদিন অন্য এক মহিলার সঙ্গে স্বামীকে ঘুড়তে দেখতে পান মফুজা। সবং থানারই অন্তর্গত তেমাথানি এলাকায় জিন্না ও ওই মহিলাকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। মফুজার দাবি, ওই মহিলাকে নাকি বিয়েও করেছে তাঁর স্বামী৷ তবে এটাই প্রথম নয়। এই নিয়ে চতুর্থ বার তিনি বিয়ে করেছেন বলে জানান মফুজা৷
মফুজা বলেন, স্বামী ঠিক মতো টাকা পয়সা পাঠাচ্ছে না৷ সংসার চালাতে হিমসিম খাওয়ার অবস্থা। ভিক্ষার পাত্র হাতে ঘুরতে হচ্ছে রাস্তায় রাস্তায় ৷ এ বিষয়ে আগেও নাকি থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি৷ কাজের কাজ হয়নি কিছুই৷ অবশেষে আর উপায়ন্তর না দেখে থানার সামনে চার সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় প্ল্যাকার্ড হাতে ধর্না দিতে শুরু করেন মফুজা৷ এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে এলাকায়।
মফুজা বিবি বলেন, ‘আমার স্বামী আমাদের চার ছেলেকে ছেড়ে আমাকে মারধর করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে৷ থানায় জানালেও পুলিশ কোনও অভিযোগ নিতে চায়নি৷ আমরা এখন ভিক্ষে করে খাই৷ আমার বাবা-মাও খুব গরিব৷ আমরা এখন কোথায় যাব? নিজেদের বাড়িঘড় নেই৷ শ্বশুর বাড়িতে থাকি৷ কিন্তু কিছুদিন আগে শাশুড়ি ঘরে তালা দিয়ে ইলেকট্রিকের লাইন বন্ধ করে দিয়েছেন৷ স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি সকলে মিলে আমাকে খুব মারধর করে৷’ তাঁর কথায়, তাঁর স্বামীর চারটে বিয়ে৷ তিনিই প্রথম৷ এখন চার নম্বর স্ত্রীকে নিয়ে থাকে সে৷ সেই স্ত্রী নাকি আবার হিন্দু৷ তাই স্বামীকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তাঁর ধর্না চলবে বলেও জানান তিনি৷ নিগৃহীত মহিলা থানায় চার সন্তানকে নিয়ে ধর্না দেওয়ার সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও দুষেছেন। তিনি প্ল্যাকার্ডে লিখেছিলেন, একজন মহিলা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া স্বত্বেও নারী নির্যাতন কমছে না।”