বাংলাহান্ট ডেস্কঃ হিন্দু দেবদেবীদের মধ্যে একজন প্রধান দেবতা হলেন জগন্নাথ দেব (Jagannath Dev) । ওড়িশা (Odisha), ছত্তীসগঢ়, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, অসম, মণিপুর ও ত্রিপুরা এমনকি বাংলাদেশের তাঁর পূজার প্রচলন আছে। দাদা বলরাম এবং বোন সুভদ্রার সাথে একসঙ্গে জগন্নাথ দেবের পূজা করা হয়। বিষ্ণুর অবতার হসাবে মনে করা হয় তাঁকে।
“জগৎ” এবং “নাথ” শব্দদুটির সংমিশ্রণে গঠিত জগন্নাথ শব্দের অর্থ “যিনি চলমান জগতের আশ্রয় বা প্রভু”। জগন্নাথ দেবের মূর্তি সাধারণত কাঠে তৈরি হয়। দুটি বড়ো বড়ো ও গোলাকার চোখ এবং অসম্পূর্ণ হাত বিশিষ্ট এই মূর্তিতে কোন পা দেখতে পাওয়া যায় না।
পূরাণ মতে, রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তার মূর্তি নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন। এরপর সেই কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে মূর্তিনির্মাণের জন্য রাজা একজন পারদর্শী কাষ্ঠশিল্পী খুঁজতে থাকেন। তখন তাঁর সামনে এক রহস্যময় বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ কাষ্ঠশিল্পী এসে মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন সময় চেয়ে নেন এবং বলেন মূর্তি নির্মানের কাজে তাঁকে যেন কেউ বাঁধা না দেয়। এই কথা শোনার পর কৌতুহলবশত রাজা রানী দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে থেকে মূর্তি নির্মানের আওয়াজ শুনতে থাকেন। বেশ কিছুদিন পর আওয়াজ বন্ধ হয়ে যেতেই, তাঁর ভেতরে ঢুকে দেখেন অর্ধ সমাপ্ত হয়ে রয়েছে ভগবান নির্মানের কাজ এবং সেই শিল্পী সেখানে উপস্থিত নেই।
কাষ্ঠশিল্পী আসলে ছিলেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। কাজে বাঁধা দেওয়ার ফলে, মূর্তির হাত নির্মিন না হওয়ায় রাজা দুঃখিত হন হয়ে পড়েন। তখন দেবর্ষি নারদ তার সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে, রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ। এই ভাবেই জগন্নাথ দেবের পূজা শুরু হয়। রথযাত্রার দিন জগন্নাথ দেব, দলরাম এবং সুভদ্রা এই তিনজনেরই একত্রে পূজা করা হয়।
পুরীর জগন্নাথ মন্দির ভারতের অন্যতম প্রসিদ্ধ এবং জাগ্রত স্থান। তবে এই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের একটা বিশেষ রীতি রয়েছে, এখানে হিন্দু ব্যাতীত অপর কোন মানুষ প্রবেশ করতে পারবে না। এই মন্দিরের গর্ভগৃহের মাথায় রয়েছে একটি সুউচ্চ শিখর বা চূড়া। মন্দিরের প্রধান দ্বারে রয়েছেন সিংহদ্বারের রক্ষক দেবতা জয় ও বিজয়। মূল প্রবেশপথের সামনের অরুণস্তম্ভটি খুরদার রাজা কোনার্কের সূর্যমন্দির থেকে নিয়ে এসেছিলেন। রথযাত্রার সময়ে এখান এওনেক বড় করে রথ যাত্রা অনুষ্ঠান পালন করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অগণিত ভক্তকূল এসে এখানে উপস্থিত হন।