বাংলাহান্ট ডেস্কঃ দেবী দূর্গার এক অপর এক রূপ হলেন দেবী শীতলা। সংসারের সকলকে রোগ ব্যাধী থেকে মুক্ত রাখতে মা শীলতাকে ডাকা হয়। মন দিয়ে ডাকলে মা তাঁর ভক্তের মিনতি শোনেন। শীত ও বসন্তের শুকনো মরসুমে শীতলা অষ্টমী তিথিতে শীতলা ঠাকুরের পূজা করা হয়ে থাকে। এই পূজা ব্রাহ্মণ ও পূজারী উভয়ই পরিচালনা করতে পারেন। তবে গ্রামবাংলায় চৈত্র মাসের মঙ্গলবার বা শনিবারে এই পূজা করা হয়ে থাকে।
পুরাণে কথিত আছে, দেবী কাত্যায়নীর শৈশবকালীন বন্ধুদের মধ্যে কলেরা, আমাশয়, হাম এবং গুটি বসন্তের মতো দুরারোগ্য রোগ ছড়াতে শুরু করেছিল জ্বরাসুর নামে এক অসুর। তখন দেবী কাত্যায়নী তাঁর কয়েকজন বন্ধুর রোগ নিরাময় করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সমগ্র বিশ্বকে সমস্ত কুসংস্কার ও রোগ থেকে মুক্তি দিতে দেবী কাত্যায়নী তখন শীতলা দেবীর রূপ ধারণ করেছিলেন।
এই শীতলা মায়ের চারটি হাতের একটি হাতে ছোট ঝাড়ু, একটি হাতে কুলো, এবং অপর দুটি হাতে শীতল জলও একটি পানীয় কাপ থাকে। মা তাঁর অসীম শক্তি দিয়ে তিনি বাচ্চাদের সমস্ত রোগ নিরাময় করেছিলেন। তারপরে দেবী কাত্যায়নী তার বন্ধু বটুককে জ্বরাসুর দৈত্যের মুখোমুখি হওয়ার জন্য বলেন। যুবক বটুক এবং রাক্ষস জ্বরাসুরের মধ্যে যুদ্ধে জ্বরাসুর বটুককে পরাস্ত করেন। মৃত বটুক আচমকাই যাদুকরীভাবে ধুলোয় পরিণত হন। এই দৃশ্য দেখে জ্বরাসুর হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন।
অদৃশ্য বটুক বাস্তবে তিনটি চোখ এবং চারটি বাহুতে যুদ্ধের কুড়াল, তরোয়াল, ত্রিশূল এবং দানবের কাটামুণ্ড নিয়ে এক ভয়াবহ পুরুষ ব্যক্তিত্বের রূপ ধারণ করে অবতীর্ণ হন। এই ভয়াবহ পুরুষ ব্যক্তিত্বের গায়ের রঙ ছিল কালো এবং পরনে ছিল বাঘের চামড়া ও গলায় ছিল মুণ্ডমালা। যার কারণ হল তখন বটুক ভগবান শিব এর উগ্র ভয়ানক ভৈরব রূপ ধারণ করেছিলেন। তখন ভৈরব জ্বরাসুরকে তিরস্কার করে বলেন যে তিনি আজ থেকে দেবী দূর্গার দাস। দীর্ঘ আলোচনা সত্ত্বেও আবারও যুদ্ধ সংগঠিত হয়। জ্বরাসুর তাঁর ক্ষমতা থেকে অনেক ভূত সৃষ্টি করেছিলেন তবে ভৈরব তাদের সকলকে ধ্বংস করতে সক্ষম হন। অবশেষে ভৈরব জ্বরাসুরের সাথে কুস্তি করে তার ত্রিশূল দিয়ে তাকে হত্যা করে।
অর্থাৎ লোকদেবী শীতলা হলেন আধা দেবী কাত্যায়নীর অপর এক রূপ রূপ। তিনি অসুস্থ জ্বরের রোগীদের শীতলতা প্রদান করেন। সংস্কৃত শব্দ ‘জ্বরা’ অর্থ “জ্বর” এবং ‘শীতল’ অর্থ “শীতলতা”। এই থেকেই এই এই মায়ের নাম শীতলা।