বাংলাহান্ট ডেস্কঃ সংসারকে এবং সংসারের মানুষজনকে বিপদমুক্ত রাখতে সবাই চায়। নিজের পরিবার পরিজনদের সুখ শান্তি সবাই আশা করেন। সন্তান সন্ততিদের যাতে কোন বিপদ স্পর্শ করতে না পারে, সেই কারণে তাঁদের মা সব সময় তাঁদের আগলে রাখে। তাই পরিবারের সকলের মঙ্গল কামনায় এবং তাঁদের বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য বিপত্তারিণী পূজো করা হয়।
পূজা অর্চনা হিন্দু মহিলাদের একটি বিশেষ কাজ। বিভিন্ন পূজোর বিভিন্ন নিয়মাবলী রয়েছে। এক এক ভগবানকে এক এক সময় স্মরণ করা হয়। বিশেষত হিন্দু মহিলারা সাত দিনে ভাগ করে এই দেবদেবীদের আরাধনা করেন। সপ্তাহের সাতদিনের মধ্যে মঙ্গলবার এবং শনিবার থাকে বিপত্তারিণী মায়ের জন্য, যিনি সব বিপদে তাঁর সন্তানদেরকে রক্ষা করেন। সংসারের সকলের মঙ্গল কামনায় বাড়ির মহিলারা এই ব্রত পালিন করে থাকেন।
বিপত্তারিণী হল দেবী দূর্গার আর একরূপ, যিঁনি বিপদ সমূহ নাশ করেন তিনিই বিপত্তারিণী। অর্থাৎ যিঁনি দুর্গা তিনিই হলেন মা বিপত্তারিণী। তিনি আবার পুরাণে কৌষিকীদেবী নামেও খ্যাতা। দেবী বিপত্তারিণীর উৎপত্তি হয়েছিল ভগবান শিবের অর্ধাঙ্গিনী দেবী পার্বতীর কোষিকা থেকে- তাই তাঁর অপর নাম কৌষিকী।
এই পূজার উৎস হল- পুরাণ মতে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামক দুই অসুরের হাতে দেবতারা পরাজিত হয়ে হিমালয়ে গিয়ে মহামায়ার স্তব করছিলেন। সেই সময় ভগবতী পার্বতী হিমালয়ের সেই স্থান দিয়ে যাচ্ছিল্লেন। দেবী তখন তাদের স্তব শুনে বললেন – “ আপনারা এখানে কার স্তব করিতেছেন ? ” সেই সময় ভগবতী পার্বতীর শরীর থেকে তার মতনই দেখতে আর এক জন দেবী বেরিয়ে আসলেন। দেবী পার্বতীকে সেই নব আবির্ভূতা দেবী জানালেন – “ ইহারা আমারাই স্তব করিতেছেন ।” বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য এই দেবীর উপাসনা করা হয় বলে, দেবী পার্বতীর আর এক রূপ হলেন দেবী বিপত্তারিণী।
আষাঢ় মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে হয় এই দেবীর পূজো করা হয়। ঘট, আমের পল্লব, শিষ সহ ডাব, তেরো রকমের ফুল, একটি নৈবেদ্য, তেরোটি অর্ধেক করে কাটা ফল,তেরোটি গোটা ফল, তেরো গাছি লাল সুতো, তেরোটি দূর্বা, তেরোটি পান, তেরোটি সুপুরির সহযোগে এই দেবীর পূজা করা হয়। গ্রামাঞ্চলে বিপত্তারিণী পূজা চারদিন ধরে করা হয়। প্রথম দিনে দেবীর আরাধনা করা হয়। পূজোয় মহিলাদের দণ্ডী কাটে দেখা যায়। তারপর দুই রাত্রী ধরে রাতে বাংলা লোকগান, ভজন ও কীর্তনের অনুষ্ঠান চলে। চতুর্থ দিনে দেবী বিপত্তারিণী বিসর্জন দেওয়া হয়। বিপত্তারিণী পূজা উপলক্ষে মেয়েরা উপবাস করে। প্রথা অনুসারে হাতে “তাগা” অর্থাৎ এক গুচ্ছ পবিত্র লাল সুতো ও দূর্বাঘাস বাঁধা হয়। পূজো শেষে মেয়েরা ব্রতকথা শুনে মিষ্ট, লুচি খেয়ে উপোস ভাঙেন। পূজোর পরে পূজোর নিয়ম অনুসারে লাল রঙের বিপদ ধাগা বা বিপত্তারিণী ধাগা সকলে ডান হাতে বাঁধেন। এই লাল ধাগা বিপদমুক্ত রাখবে বলে মনে করা হয়।