প্রবল বৃষ্টি হতে পারে দক্ষিণবঙ্গে, বন্যায় ভাসতে পারে কয়েকটি জেলাঃ আবহাওয়ার খবর

আবহাওয়ার খবর ঃ একদিকে কোভিড এবং অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আশঙ্কায় এই মুহূর্তে রীতিমতো শঙ্কিত বাংলা। যদিও আবহাওয়াবিদদের অনুমান অনুযায়ী, বাংলার থেকে এই মুহূর্তে মুখ ফিরিয়েছে ইয়াস। বরং তার ল্যান্ডফল হতে চলেছে ওড়িশার চাঁদবালি এবং ধামুরা বন্দরের কাছে। মৌসম ভবনের শেষ আপডেটে জানানো হয়েছে ক্রমশই উত্তর পশ্চিম অভিমুখে আরো বেশি সরে যাচ্ছে ইয়াস। শেষ কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার গতিবেগে তীরের দিকে এগিয়ে আসছে সুপার সাইক্লোন। তবে এই মুহূর্তে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে বাংলা। কারণ, ল্যান্ডফল না হওয়ায় ভারি দুর্যোগের সম্ভাবনা নেই। যদিও ভারী এবং অতি ভারী বৃষ্টির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বেশকিছু জেলাজুড়ে।

ইয়াস মোকাবিলার কন্ট্রোল রুমে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালঃ

ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে আলোচনার জন্য নবান্নের কন্ট্রোল রুমে পৌঁছেছেন জগদীপ ধনকরও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত বিষয়গুলি ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন তাকে। ইয়াসের আগমন বিষয়ে ইতিমধ্যে আলোচনাও হয়েছে দুজনের মধ্যে। মুখ্যমন্ত্রীর আগেই জানিয়েছেন, গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কিছু বিশেষ মেডিকেল টিম। শুধু তাই নয় যোগাযোগ রাখা হচ্ছে নির্দিষ্ট এলাকার প্রশাসনিক কর্তা, জেলাশাসক ব্লক স্তরের আধিকারিকদের সঙ্গেও। ডিভিসি এবং সেজন্য তাদের সঙ্গেও সবসময় যোগাযোগ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে খোলা হয়েছে বেশকিছু হেল্পলাইনও।

দক্ষিণ বঙ্গের কোন জেলায় কতটা আশঙ্কাঃ

দক্ষিণ বঙ্গের জেলা গুলির মধ্যে ইতিমধ্যেই লাল সর্তকতা জারি করা হয়েছে দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। এছাড়া বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর জানিয়েছে, সুবর্ণরেখা, কংসাবতী, দামোদর, ময়ূরাক্ষী এবং অজয় নদের জলস্তর আগামী দুই দিনে বাড়তে পারে অনেকটাই। ফলতো পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, নদিয়া ও হুগলির বিভিন্ন এলাকায় ভারী অতি ভারী বৃষ্টির দৌলতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষত আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর বঙ্গের জেলা গুলি কিছুটা রেহাই পেলেও যথেষ্ট খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে দক্ষিণ বঙ্গের জেলা গুলিকে কেন্দ্র করে। কারণ বুধবার সকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বিক্ষিপ্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা তো পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। ভারী বৃষ্টি হতে পারে কলকাতাতেও। তবে ঝড়ের গতিবেগ কম হওয়ায় আম্ফান এর তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা কম হবে এমনটাই আশা হাওয়া অফিসের।

কোথায় কত হতে পারে ঝড়ের গতিবেগঃ

স্থলভাগের দিকে যত এগিয়ে আসবে ততই আস্তে আস্তে গতি বাড়াবে সুপার সাইক্লোন ইয়াস। শুধু তাই নয়, বছরের শেষ ব্লাড মুন থাকার কারণে এর ক্ষমতা হতে চলেছে আরও ধ্বংসাত্বক। ওড়িশার পারাদ্বীপ, চাঁদবালি, বালেশ্বর এবং অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে ঝড়ের গতি ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার/ঘন্টা হতে পারে বলেও অভিমত আবহাওয়াবিদদের। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তিতে থাকতে পারে বাংলা। আবহাওয়াবিদদের অনুমান ২৬ মে কলকাতায় ঝোড়ো হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ৮৫ কিলোমিটার/ঘন্টা। উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা অনুযায়ী ইয়াসের সব থেকে বড় ধ্বংসাত্মক প্রভাব দেখা যেতে পারে দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে। এবারে ঘন্টায় হাওয়ার গতিবেগ সর্বোচ্চ হতে পারে প্রায় ১২০ কিলোমিটার অবধি। এই কারণেই সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল গুলিতে এই মুহূর্তে বিশেষ সর্তকতা জারি করেছে নবান্ন। ইতিমধ্যেই সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে এলাকাবাসীকে।

হুগলিতে ঘূর্ণিঝড়ঃ

মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎই হুগলির ব্যান্ডেলে দেখা গেল একটি টুকরো ঘূর্ণি। হাওয়ায় পাক খেতে খেতে মতো ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছিল ওই টুকরো মেঘ। আবহাওয়াবিদদের অনুমান, হঠাৎ করে তাপমাত্রা অনেকখানি কমে যাওয়ায় এ ধরনের দুর্যোগ সৃষ্টি হয়েছে ব্যান্ডেলে। ইয়াসের তাণ্ডব থেকে বাংলা কিছুটা মুক্তি পেলেও এখনই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার উপায় নেই আরেকবার বুঝিয়ে দিল এই ঘূর্ণিটি।


Abhirup Das

সম্পর্কিত খবর