বাংলাহান্ট ডেস্ক: ২০১৯ সালে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে স্বামী নিত্যানন্দের (Swami Nithyananda) বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়। তারপরেই হঠাৎ উধাও হয়ে যান তিনি। কয়েক মাস পর জানা যায়, নিজের আস্ত একটি দেশ বানিয়েছেন এই ধর্মগুরু! জানা যায়, ইকুয়েডরের কাছে একটি আস্ত দ্বীপ রাষ্ট্র বানিয়েছেন তিনি। নিজের দেশের নাম রেখেছেন ‘কৈলাস’ (Kailasa)। কেউ কি চাইলেই নিজের দেশ বানিয়ে ফেলতে পারে? কী বলছে আইন?
স্বামী নিত্যানন্দের মতে, কৈলাস হল বিশ্বের বৃহত্তম হিন্দুরাষ্ট্র। যে কোনও হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষই কৈলাসে গিয়ে বসবাস করতে পারেন। কৈলাসের একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইটও তৈরি করেছিলেন এই ধর্মগুরু। সেখানে দেশের পতাকা ও অন্যান্য তথ্য দেওয়া হয়েছিল। কৈলাসের নাকি নিজস্ব মুদ্রাও রয়েছে। সেটিকে বলা হয় কৈলাসিয়ান ডলার। পলাতক এই ধর্মগুরুর দাবি ছিল, তিনি নাকি অন্যান্য দেশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের চুক্তি করেছিলেন।
বলা হয়, কৈলাসে নাকি স্বাধীন একটি সরকার রয়েছে। তার নিজস্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এমনকী আবাসন মন্ত্রক, শিক্ষা মন্ত্রক ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও রয়েছে। ইকুয়েডরের একটি দ্বীপে নিজের দেশ তৈরি করেছেন বলে জানান নিত্যানন্দ। সরকারি নাম রেখেছিলেন রিপাবলিক অফ কৈলাস (Republic of Kailasa)। এই দেশে আবার তিনটি সরকারি ভাষাও ছিল। ইংরেজি, সংস্কৃত ও তামিলকে এখানকার সরকারি ভাষা হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
কৈলাসের জাতীয় ফুল পদ্ম এবং ভগবান শিবের বাহন নন্দী হল জাতীয় পশু। একটি দেশের মধ্যে যা যা থাকা উচিত তা সবই করে ফেলেছিলেন স্বামী নিত্যানন্দ। কিন্তু জাতিসংঘ (United Nations) কৈলাসকে মান্যতা দেবে কি না, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ স্বামী নিত্যানন্দকে পলাতক ঘোষণা করেছে ভারত। এমনকী ইন্টারপোলও তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
আপনাকে জানিয়ে রাখি, দক্ষিণ আমেরিকায় অনেক দ্বীপ রাষ্ট্র রয়েছে যেখানে দ্বীপ কেনা যায়। সাধারণত ধনী ব্যবসায়ীরা এই দ্বীপগুলি কিনে সেখানে ছুটি কাটানোর জায়গা তৈরি করেন। জায়গা অনুযায়ী দ্বীপের দামের ফারাক হয়। যেমন মধ্য আমেরিকায় কম দামে দ্বীপ কিনতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে ইউরোপে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয় দ্বীপ।
এ বার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনিও কি চাইলে নিজের দেশ বানাতে পারবেন? সেক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি, এটি মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। আপনাকে আন্তর্জাতিক আইনের একাধিক শর্ত মানতে হবে। তারপরেও কোথাও কোনও ত্রুটি থাকলে আপনার জমিটি দেশ হিসেবে মান্যতা পাবে না। দেশ বানাতে চাইলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল সীমানা ঠিক করা। অনেক সময় ছোট ছোট দেশ নিজেদের মান্যতা দিয়ে থাকে। যাতে তারা নিজেদের মধ্যে লেনদেন করতে পারে।
কিন্তু জাতিসংঘের থেকে মান্যতা পাওয়াই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি হলে দেশগুলি সহজেই ঋণ নিতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব ব্যাঙ্কও সহজেই দেশগুলিকে ঋণ দিতে পারে। যদিও জাতিসংঘের মান্যতা ছাড়াই দেশ গঠন করা যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে নানা রকম ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। কয়েকটি নিয়ম মানলেই আপনিও জাতিসংঘের থেকে মান্যতা পেতে পারেন। প্রথমে মহাসচিবকে একটি চিঠি লিখতে হবে। এরপর আপনার জাতিসংঘের চার্টারে আপনার ইস্যু তুলে ধরা হবে।
সেখানে নিজের আলাদা দেশের প্রমাণ ও কারণ দেখাতে হবে আপনাকে। এছাড়াও বিশ্বের কাছে কী ভাবে আপনি কার্যকরী হবেন জানাতে হবে সেটিও। একইসঙ্গে নিজেকে শান্তিপ্রিয় প্রমাণ করতে হবে। এটি মোটেও সহজ নয়। যেকোনও দেশকেই চলতে গেলে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে হয়। সব দেশকেই আমদানি-রফতানির উপর নজর রাখতে হয়। এর জন্য মুদ্রা প্রয়োজন। এই সব ক’টি বানাতে পারলে আপনিও নিজের দেশ বানাতে পারেন।