বাংলা হান্ট ডেস্কঃ পুলিশ হেফাজতে বন্দিমৃত্যু, রাজ্যজুড়ে যখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত তখন এ ধরনের ঘটনা শুধু লজ্জাকর নয় নিন্দনীয়ও বটে৷ কারণ সংবিধান অনুযায়ী যেকোনও আসামির আইনি বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ফের একবার ধরনের একটি ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠলো পূর্ববর্ধমানের কুলটির অন্তর্গত বরাকর এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গতকাল আরমান খান নামের এক ব্যক্তিকে ছিনতাইয়ের অপরাধে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সকালে আত্মীয়রা জানতে পারেন অসুস্থ অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়েছে আসানসোল জেলা হাসপাতালে। কিন্তু তার আত্মীয়রা হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন মৃত্যু হয়েছে অভিযুক্তের।
এরপরই কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে এলাকা, পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে উত্তেজিত জনতা। পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি রীতিমতো খণ্ডযুদ্ধও বেঁধে যায় পুলিশ এবং আম জনতার মধ্যে। বরাকর পুলিশ ফাঁড়িতেও ভাঙচুর চালায় জনতা। থানার মুখে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয়। বিক্ষোভের জেরে বন্ধ হয়ে যায় আশপাশের দোকানপাট। বন্দী মৃত্যুর ঘটনার জেরে অবশ্য ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে বরাকর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্ব থাকা আধিকারিক অমরনাথ দাস এবং আরেক আধিকারিক প্রশান্তকুমার পালকে।
আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনার অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘পুলিশ হেফাজতে এক জনের মৃত্যুর অভিযোগ এসেছে। তার অভিযোগ জমা পড়েছে। আমরা তদন্ত করছি। প্রাথমিক ভাবে দু’জন অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জনতা ঢুকে পড়েছিল। গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। তেমন ভাবে কেউ আঘাত পায়নি।’’
মৃতের পরিবারের দাবি আরমানকে এর আগেও একবার থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এবারের মতো ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। এমনকি তার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়েও সঠিকভাবে কিছু জানানো হয়নি তার আত্মীয়দের। আরমানের আত্মীয় মহম্মদ আনসারি বলছেন, ‘‘ওকে এর আগেও এক বার পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তার পর ওকে ছেড়ে দিয়েছিল। আজ খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে দেখলাম দেহ পড়ে আছে। পুলিশ কি যাকে ইচ্ছা মেরে দেবে? কোনও আইন নেই?’’
মৃত আরমান খান বরাকরের স্টেশন রোডের বাসিন্দা। সূত্রের খবর অনুযায়ী এর আগেও ছোটখাটো অপরাধে পুলিশের খাতায় নাম উঠেছে তার। অপরাধ করলে তার শাস্তি নিশ্চয়ই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আইনের রক্ষক যারা, তাদের কি অধিকার রয়েছে আইন হাতে তুলে নেওয়ার? প্রশ্ন উঠছে এই নিয়েই।