ঠিক ১০০ বছর আগে এই ‘সাইক্লোন” প্লেগ-এর মতো মহামারীকে খতম করার জন্য হয়েছিল ব্যাপক কার্যকর

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গোটা বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর এবার মানুষের এর আগেও এর থেকে ভয়ানক প্রকোপ সৃষ্টি করা মহামারীর কথা মনে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা পুরনো মহামারীর কথা উল্লেখ করে পরামর্শ দিচ্ছে যে এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বাঁচতে মানুষের কি করতে হবে আর কি না। আর এই মহামারীর মধ্যে বাংলার উপকূলে সুপার সাইক্লোন আমফান (Super Cyclone Amphan) ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলা চালাল।

বিশ্বে ১০০ বছর আগে প্লেগ মহামারীর সময় একটি সাইক্লোন এসেছিল। যদিও, তখন ওই সাইক্লোন প্লেগের মতো মহামারীকে খতম করতে সহযোগিতা করেছিল। আপনাদের জানিয়ে দিই যে, ১৮৯৪ সালে জাহাজের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে প্লেগ ছড়িয়ে পরেছিল আর ১৮৯৬ সালে ওই প্লেগ জাহাজে করে বোম্বে (মুম্বাই) পৌঁছেছিল। তখন ওই মহামারী বোম্বেতে এত ক্ষয়ক্ষতি করেছিল যে, ওই প্লেগের নাম বোম্বে প্লেগ (Bombay Plague) হয়ে গেছিল।

plague

প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার সময় বোম্বের মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক ছিল। আর তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার জন্য বোম্বে ছেড়ে নিজের নিজের রাজ্যে ফিরে গেছিল। আপনাদের জানিয়ে দিই, মহামারী আইনও বোম্বে প্লেগের কারণে ১৮৯৭ সালে লাগু করা হয়েছিল।

প্লেগ ১৮৯৪ সালে হংকং থেকে ছড়ানো শুরু করে। এরপর ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউট এর অ্যালেক্সান্ডার অ্যালেক্সান্ডার ইয়ারসিন হংকং দিয়ে প্লেগ ছড়ানোর কারণের তদন্ত পরীক্ষা করেছিলেন। উনিই প্লেগ ছড়ানোর ব্যাকটেরিয়াকে আলাদা করেছিল আর ইঁদুর থেকে এই প্লেগ ছড়িয়েছে সেটি জানতে পারেন। এরপর ১৮৯৮ সালে ওনার সহযোগী ভারতে এসে তদন্ত করে জানতে পারেন যে, মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস ইঁদুর থেকেই ছড়িয়েছিল।

ship and pandemic

শত শত বছর পর্যন্ত মানুষ এটাই জানত যে, প্লেগ ইঁদুরের থেকেই মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। আর এই কারণে অনেক শহরে ইঁদুর ধরার জন্য অনেককে চাকরিতে রাখা হয়েছিল। আরেকদিকে, জাহাজ গুলোকে গোটা বিশ্বে প্লেগ ছড়ানোর জন্য দায়ি মানা হয়। প্রসঙ্গত, জাহাজে ইঁদুরের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আর খাওয়ার উপলব্ধ থাকে। ইঁদুরেরা যাত্রীদের জন্য রাখা খাবার খায়, আর যাত্রীদের মধ্যে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে। আর এই কারণে জাহাজ এবং জাহাজের যাত্রীদের মাধ্যমে প্লেগ গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

সেই সময় সব দেশের মধ্যে বেশীরভাগ বাণিজ্য জাহাজের মাধ্যমেই হত। উড়িষ্যা বাইটস এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, এই মালবাহক জাহাজে থাকা ইঁদুর গুলো জাহাজের সামগ্রীকে সংক্রমিত কোর্ট। আর সেই কারণে সেই সামগ্রী গুলোকে অনেকদিন বন্দরেই ফেলে রাখত হত এবং সেইজন্য সেই সামগ্রীর দামও বৃদ্ধি পেট। এরফলে বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থায় অনেক খারাপ প্রভাব পড়ত।

বৈজ্ঞানিকরা এই সমস্যার সমাধানের জন্য প্রথমে সালফার ডাইঅক্সাইড জ্বালিয়ে জাহাজে ধুয়ো ছড়াত। এর ফলে প্লেগ খতম হওয়ার সম্ভাব্যতা বেড়ে যেত। যদিও এই প্রক্রিয়া অনেক সময় সাপেক্ষ ছিল। এর সাথে সাথে প্রতিটি যাত্রার পর জাহাজকে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেতে হত। আজ থেকে ঠিক ১০০ বছর আগে জার্মানির কোম্পানি ডিজি (Degesch) ১৯২০ সালে জ্যাক্লোন বি (Zyklon B) গ্যাস বানিয়ে জাহাজ থেকে প্লেগ দূর করার কাজে বিপ্লব এনেছিল।

জার্মানিতে সাইক্লোন এর জন্য জ্যাক্লোন শব্দের ব্যবহার করা হয়েছিল কারণ এই গ্যাস সায়নাইড আর ক্লোরিনের কম্পাউন্ড থেকে মিলিয়ে বানানো হয়েছিল। জ্যাক্লোন প্লেগ খতম করতে কার্যকর হওয়ার কারণে গোটা বিশ্বে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এই গ্যাস বানানোর পর জাহাজ গুলোকে প্লেগ মুক্ত করার জন্য বছরে মাত্র দুবার এই প্রক্রিয়ার মাধ্যম দিয়ে যেতে হত। এর সাথে সাথে জাহাজের সামগ্রী গুলোকে আর কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হত না। এই গ্যাস গোটা বিশ্বে প্লেগ আটকাতে সবথেকে বেশি কার্যকর ছিল বলে মানা হয়।

Koushik Dutta

সম্পর্কিত খবর