বাংলা হান্ট ডেস্কঃ তদন্তে ধীর গতি নিয়ে ফের আদালতের প্রশ্নের মুখে ইডির ভূমিকা। প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির সূত্র ধরেই সামনে উঠে এসেছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) সংস্থা ‘লিপস অ্য়ান্ড বাউন্ডস’ (Leaps And Bounds) এর নাম। তদন্তের স্বার্থে সেই সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালায় ইডি। একাধিক ব্যক্তিকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। জেরার মুখোমুখি হন অভিষেকও। বাজেয়াপ্ত করা হয় সংস্থার সম্পত্তি। তবে অভিষেকের ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থা ও তার ডিরেক্টরদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া সম্পত্তির পরিমাণ এত কম কেন, সেই নিয়ে এবার প্রশ্ন তুললেন হাই কোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অমৃতা সিনহা (Justice Amrita Sinha)।
গত এপ্রিল মাসে অভিষেকের ‘লিপস অ্য়ান্ড বাউন্ডস’ এর কত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, সেকথা কলকাতা হাইকোর্টে জানায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। সেই সময়ও বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন বিচারপতি। এদিন কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি ছিল। এদিন রিপোর্ট পেশ করে আদালতে ইডি জানায়, এখনও পর্যন্ত ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ থেকে ১৪৮ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত ২৫০ কোটি টাকা।
ইডি আরও জানায় গতকালই ‘লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার আরও সাড়ে ১৩ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে ইডির রিপোর্ট দেখে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন জাস্টিস সিনহা। তদন্তকারীদের উদ্দেশে বিচারপতির প্রশ্ন, ‘‘কোম্পানি আর কোম্পানির ডিরেক্টরদের সম্পত্তির পরিমাণ এত কম কেন?’’
ইডি ও সিবিআইয়ের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি বলেন, ‘‘আপনারা যে রিপোর্ট দিচ্ছেন, তাতে মনে হচ্ছে, এই সংস্থার নিজস্ব কোনও আয়ের উৎসই নেই। যা টাকা আসছে তা অন্য অন্য কোথা থেকে আনা হচ্ছে। কোথা থেকে ওই টাকা এসেছে, সেই বিষয়ে আপনারা খোঁজ নিয়েছেন?’’
এরপরই ইডির তদন্তকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ তোলেন বিচারপতি। সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, ‘‘পুরো তদন্ত আদালতের নজরদারিতে চলছে। কাকে, কখন, কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, কাকে করা হবে না, ইডি অফিসারদের এই সব তথ্য বিশ্বস্ত সূত্র মারফত আমার কাছে রয়েছে।’’ যেসকল অফিসার তদন্তে গাফিলতি করছেন তাদের নামও জানেন বলে ভরা এজলাসে মন্তব্য করেন বিচারপতি সিনহা। এই গতিতে তদন্ত চলে তা কবে সেই হবে সেই নিয়েও আশঙ্কার কথা বলেন বিচারপতি।
আরও পড়ুন: কাকুর পর এবার বালু, জ্যোতিপ্ৰিয়র হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করতে চেয়ে আদালতে ED
জবাবে ইডির আইনজীবী বলেন, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত জরুরি। তবে সুপ্রিম কোর্টের রক্ষাকবচ থাকায় তারা সেটা করতে পাচ্ছেন না। এ কথা শুনে
জাস্টিস সিনহা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট রক্ষাকবচ থাকলেও মানিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতেই পারে। তাতে কোনো বাধা নেই। পাল্টা ইডি জানায় সুপ্রিম রক্ষাকবচ থাকায় সেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। এদিন আদালতের কাছে আরও কিছুটা সময় চায় ইডি। সব শেষে সিবিআই ও ইডিকে নতুন করে রিপোর্ট জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। আগামী ৩০ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি।