বাংলাহান্ট ডেস্ক: ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor)-এর সময় পাক হামলা থেকে রক্ষা করা ১৯ জন সিআইএসএফ জওয়ানকে পুরস্কৃত করা হলো ভারত–পাক সংঘাত ছ’মাস অতিক্রম করেছে। তবে সেই উত্তপ্ত সময়ের বহু অজানা বীরগাথা এখনও সামনে আসছে। সম্প্রতি এমনই এক অসাধারণ সাহসিকতার গল্প প্রকাশ্যে আনল কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (CISF)। কাশ্মীরের উরিতে অবস্থিত এক গুরুত্বপূর্ণ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে পাকিস্তানের হামলা থেকে রক্ষা করে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন ১৯ জন সিআইএসএফ জওয়ান। তাঁদের ওই দুঃসাহসিক ভূমিকার স্বীকৃতি দিল বাহিনী। দিল্লিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই ১৯ জন জওয়ানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত করা হয়।
পুরস্কৃত হল ‘সিঁদুর’ (Operation Sindoor) চলাকালীন পাক হামলা বানচাল করা ১৯ জওয়ান
কাশ্মীরের বারামুলা জেলার বিতস্তা নদীর উপর নির্মিত উরির জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সামরিক ও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত ৬ এবং ৭ মে, পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’ (Operation Sindoor)-এর পরই পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তান। এলোপাথারি ড্রোন হামলা ও গোলাবর্ষণে নিশানা বানানো হয় ওই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে। ঠিক সেই সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন কমান্ড্যান্ট রবি যাদবের নেতৃত্বাধীন সিআইএসএফ-এর ১৯ জন জওয়ান। হামলার মাত্রা বাড়তে থাকলেও নিজেদের অবস্থান অটুট রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে থাকেন তারা।
আরও পড়ুন:লক্ষ্য বিকশিত ভারত গড়া! সংবিধান দিবসে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী
পাকিস্তানের ড্রোন হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি জওয়ানদের একাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। আশপাশের গ্রামগুলিতে বিস্ফোরণের আতঙ্কে অসংখ্য মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলেন। পরিস্থিতি বুঝে কেন্দ্রের চারপাশের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে বাসিন্দাদের বের করে আনা হয়। রাতের অন্ধকারে দ্রুত সংগঠিত অভিযানে ২৫০ জনেরও বেশি গ্রামবাসীকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত করেন ওই জওয়ানরা। যাতে পাক ড্রোনের নিশানায় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বা গ্রামটি দৃশ্যমান না হয়, সেই জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় কেন্দ্র-সহ গোটা এলাকার সমস্ত আলো। এই উদ্যোগে একদিকে যেমন গ্রামবাসীর প্রাণ রক্ষা হয়েছে, তেমনই নিরাপদ থেকেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো।
উল্লেখযোগ্যভাবে, সিআইএসএফ সাধারণত বিমানবন্দর, সরকারি ভবন, পারমাণবিক প্রকল্প ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু যুদ্ধসদৃশ পরিস্থিতিতে উরির এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র রক্ষায় যে উপস্থিত বুদ্ধি, সাহস এবং মানবিকতার পরিচয় ১৯ জন জওয়ান দেখিয়েছেন, তার প্রশংসা করেছে বাহিনীই নয়, দেশের প্রতিরক্ষা মহলও। চাপে থাকা অবস্থায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং মানুষের প্রাণ বাঁচাতে উদ্যোগী হওয়ার মধ্যে দিয়ে তাঁরা নাগরিক সুরক্ষার এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছেন।

মঙ্গলবার দিল্লিতে সিআইএসএফ-এর এক বিশেষ কর্মসূচিতে ওই ১৯ জন জওয়ানের বীরত্বগাথা তুলে ধরে তাঁদের সম্মান জানানো হয়। অনুষ্ঠানের পর এক্স হ্যান্ডেলে সিআইএসএফ-এর তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, “সীমান্তে গোলাবর্ষণের মাঝেও নিজেদের জীবন বাজি রেখে যে সাহস, নৈপুণ্য ও কর্তব্যনিষ্ঠা দেখিয়েছেন আমাদের জওয়ানরা, তা সত্যিই অসাধারণ। তাঁরা শুধু দেশের কৌশলগত স্থাপত্যই রক্ষা করেননি, নিরাপদে স্থানান্তরিত করেছেন ২৫০ জন গ্রামবাসীকে। জাতি তাঁদের সাহসিকতায় গর্বিত।”












