বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: বিশ্ব ক্রিকেটে এমন বহু তারকা রয়েছেন যারা হয়তো ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজেদের কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন, কিন্তু কখনো কোনও আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল জেতা তো দূরের কথা ফাইনালে খেলতে পর্যন্ত পারেনি। দেশের হয়ে খেলা শুরু করলে প্রত্যেক ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে দেশকে আইসিসি ট্রফি জেতানো। কিন্তু এবি ডিভিলিয়ার্স, ব্রায়ান চার্লস লারার মতো কিংবদন্তিরা অসাধারণ ক্রিকেটার হওয়া সত্ত্বেও তাদের দেশকে কিছু জেতানোর স্বপ্ন অপূর্নই থেকে গিয়েছে। এমনকি কোনও বিশ্বকাপ ফাইনালে পর্যন্ত তারা পৌঁছতে পারেননি কোনওদিনই। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা সেই ভাগ্যবান ক্রিকেটারদের কথা আলোচনা করব যারা পাঁচ বা তার বেশি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে পেরেছেন।
বিরাট কোহলি (Virat Kohli): প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক অধিনায়ক হওয়ার আগেই তরুণ বয়সে ২০১১ ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। তারপর ২০১৩ সালে ভারতের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন কিন্তু তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স সত্ত্বেও ভারতীয় দলকে হেরে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এরপর ২০১৭ সালে পাকিস্তানের কাছে তার নেতৃত্বাধীন ভারত হেরেছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল। ২০২১ সালে প্রথম বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ও ইংল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার স্বীকার করতে হয়েছিল তার নেতৃত্বাধীন দলকে। অর্থাৎ এখনো পর্যন্ত পাঁচটি আইসিসি ট্রফি ফাইনাল খেলে তার মধ্যে দুটি জয়ের স্বাদ পেয়েছেন কোহলি। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে আগামী জুন মাসে আবারো একটি আইসিসি ট্রফির ফাইনাল খেলবেন তিনি।
রোহিত শর্মা (Rohit Sharma): ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলতে নেমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে দলকে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করেছিলেন রোহিত। এরপর ২০১৩ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। তারপর বিরাট কোহলির মতোই ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং ২০২১ সালের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেছেন তিনি। আগামী জুন মাসে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে কোন আইসিসি ট্রফির ফাইনাল হিসেবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তিনি নেতৃত্ব দেবেন দলকে।
কুমার সাঙ্গাকারা (Kumar Sangakara): ২০০২ সালে বৃষ্টি বিঘ্নিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে যখন ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে যুগ্মজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল তখন শ্রীলঙ্কা দলের অংশ ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৭ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১১ সালের যে ওডিআই বিশ্বকাপ ২০১২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেও এবং এর মধ্যে বেশ কয়েকটিতে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেও ট্রফি আসেনি তার হাতে। শেষ পর্যন্ত ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্যক্তিগত ভাবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে প্রথম এককভাবে আইসিসি ট্রফি জয়ের স্বাদ পান তিনি। মোট ৬ বার তিনি আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছেন।
মাহেলা জয়াবর্ধনে (Mahela Jayawardene): অবিকল কুমার সাঙ্গাকারার মতোই ২০০৭, ২০০৯ ২০১১ ও ২০১২ সালগুলিতে আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছেন তিনি। ২০১১ সালে ভারতের মুম্বাইয়ের মাটিতে তার দুর্দান্ত শতরানের ভর করে নিজেদের দ্বিতীয় ওডিআই বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছাকাছি এসেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অবশেষে ২০১৪ সালে সাঙ্গাকারার মতোই নিজের শেষ আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও কোন আইসিসি ট্রফি এককভাবে জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয় তারও।
রিকি পন্টিং (Ricky Ponting): বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সফল অধিনায়ক। এর প্রথম আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টের ফাইনালটি জিতেছিলেন তিনি ১৯৯৯ সালে যখন স্টিভ ওয়ার নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তার আগে ১৯৯৬ সালের ওডিআই বিশ্বকাপ ফাইনালও খেলেছিলেন তিনি যেখানে অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনাল টি হারতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এরপর তার অধিনায়কত্বে ২০০৩ এবং ২০০৭ ওডিআই বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া যেখানে ২০০৩ সালে তিনি দুর্দান্ত শতরান করেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার নেতৃত্বে ২০০৬ ও ২০০৯ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।
যুবরাজ সিং (Yuvraj Singh): তারকা ভারতীয় অলরাউন্ডার বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আইসিসি ফাইনাল খেলা ব্যক্তি। ২০০৩ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল যখন অস্ট্রেলিয়ার কাছে ওডিআই বিশ্বকাপ ফাইনাল হারেন তখন সেই দলের অংশ ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটি ছিল তার তৃতীয় আইসিসি ফাইনাল। এর আগে ২০০০ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়া ভারতীয় দলের অংশ ছিলেন তিনি। ২০০২ সালে বৃষ্টিবিঘ্নিত চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফি ফাইনালে ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে যখন যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় তখন ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর নিজে অসাধারণ পারফরম্যান্স করে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০১১ ওডিআই বিশ্বকাপ ভারতকে জিতিয়েছিলেন যুবরাজ। কিন্তু জীবন যেমন দেয়, তেমন ফিরিয়েও নেয়। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মূলত তার ধীরগতির ইনিংসের কারণেই শ্রীলঙ্কার কাছে হার মানতে হয়েছিল ভারতীয় দলকে। অর্থাৎ যুবরাজ সিং মোট ৭ টি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছেন।