এক এক করে পদত্যগ করলো ৮০ জন বিধায়ক, টালমাটাল পরিস্থিতিতে রাজস্থানের ভবিষ্যৎ

বাংলাহান্ট ডেস্ক: সামনেই রয়েছে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচন (Congress Presidential Election)। ইতিমধ্যেই সভাপতির পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে এসেছে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের (Ashok Gehlot) নাম। সম্প্রতি দিল্লিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেছেন তিনি। যদিও গেহলট এবং কংগ্রেসের একাংশ চান, এই পদে ফিরে আসুন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

যদিও রাহুল এই পদে ফিরবেন না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় পদগুলি দেওয়া নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ এসেছে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি করার। তবে এবার দীর্ঘ ২৪ বছর পর গান্ধী পরিবারের বাইরের কেউ সভাপতির পদে বসতে পারেন।

তবে কংগ্রেস সভাপতি হওয়া নিয়ে গেহলটের কিছু মন্তব্যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কংগ্রেসের দলীয় নীতি অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি একটি পদেই বহাল থাকতে পারবেন। এদিকে অশোক গেহলট যদি সভাপতি নির্বাচিত হন, তাহলে তাঁকে ছাড়তে হবে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীত্ব।তাঁর জায়গায় রাজস্থানের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নাম উঠে এসেছিল শচীন পাইলটের। তবে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলেও মুখ্যমন্ত্রীত্ব ছাড়বেন না তিনি। তাঁর এই মন্তব্যে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হয় দলের অন্দরে।

সূত্রের খবর, কংগ্রেসের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অশোক গেহলট মুখ্যমন্ত্রী হলে রাজস্থানের তখত তুলে দেওয়া হবে শচীন পাইলটের হাতেই। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজস্থানের রাজনীতিতে রীতিমতো আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। অশোক গেহলটের ক্যাম্প শচীন পাইলটের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।

শচীন-বিরোধী মনোভাব দেখাচ্ছে তারা। কোনওভাবেই পাইলটকে রাজস্থানের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না, এই দাবিতে গেহলট শিবিরের ৮০ জনেরও বেশি বিধায়ক নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।রবিবার রাতে রাজস্থানের বিধানসভার স্পিকার সিপি জোশীর কাছে তাঁরা তাঁদের ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, তবে কি পড়ে যেতে চলেছে অশোক গেহলট সরকার?

গেহলট সরকারের একজন মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ প্রতাপ খাচারিয়াওয়াস জানিয়েছেন, ইস্তফা দিয়েছেন ৯২ জন বিধায়ক। তাঁর মতে, বিধায়কদের মতামত ছাড়াই শচীন পাইলটকে রাজস্থানের দায়িত্ব নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড, তা অনুচিত।তবে সরকারের পতন হওয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এভাবে সরকারের পতন হয় না।” রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, খাচারিয়াওয়াসের এই মন্তব্যে লুকিয়ে রয়েছে গেহলট শিবিরের গেমপ্ল্যান।

গেহলট তাঁর সরকারের পতন চান না। তবে বিধায়কদের পদত্যাগ করিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান। গেহলটের দাবি, পাইলট ছাড়া যে কাউকে রাজস্থানের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী করা যেতে পারে।গেহলোট শিবিরের নিজেদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিধানসভার স্পিকার সিপি জোশীর কাছে। তবে স্পিকার এগুলি গ্রহণ না করা অবধি তাঁদের সদস্যপদ শেষ হবে না। এই বিষয়ে স্পিকার এখনও কোনও সিদ্ধান্তে আসেননি বলেই জানা যাচ্ছে। 

গেহলট শিবিরের এই বিদ্রোহী মনোভাবকে শীর্ষ নেতৃত্বকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী, প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী শচীন পাইলটকে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী করা নিয়ে একমত হয়েছেন।এবার তাঁদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা গেহলট শিবির যেভাবে করছে, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। হাইকমান্ড গেহলট শিবিরের উপর পদক্ষেপ করতে পারে। কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার আগেই গান্ধী পরিবারের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করা গেহলটের বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে মত একাংশের।

অশোক গেহলটের শিবির শীর্ষ নেতৃত্বের উপর চাপ বাড়ানোর রাজনীতি যেভাবে করতে তাতে এই পরিকল্পনা ব্যাকফায়ারও করতে পারে। যেমনভাবে হাইকমান্ড পদক্ষেপ করতে পারে, একইভাবে পাইলোট শিবিরও গেহলটের বিরুদ্ধে প্রচারে নামতে পারে।পাইলট শিবিরে প্রায় ২৫ জন বিধায়ক রয়েছেন, যাঁরা পদত্যাগ করতে পারেন। এমনটা হলে গেহলট সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

প্রসঙ্গত, রাজস্থানের বিধানসভায় রয়েছে ২০০টি আসন। সেখানে কংগ্রেসের ১০৮ জন বিধায়ক রয়েছেন। সরকারের সমর্থনে রয়েছেন সিপিআইএম-এর ২ জন, ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টির ২ জন, রাষ্ট্রীয় লোকদলের একজন এবং ১৩ জন নির্দল বিধায়ক।কংগ্রেসের ১০৮ জন বিধায়কের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন গেহলট শিবিরের। বাকি ২৫ জন পাইলট শিবিরের। বিরোধী শিবিরে বিজেপি-র রয়েছে ৭১ জন এবং রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির রয়েছেন ৩ জন বিধায়ক।  

Subhraroop

সম্পর্কিত খবর