বাংলা হান্ট ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় নারী সুরক্ষার প্রসঙ্গ বারংবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। তবে, ধর্ষকদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে রেহাই পাচ্ছেনা নিষ্পাপ শিশুরাও। সম্প্রতি অন্ধ্রপ্রদেশের এক পাশবিক ঘটনার কথা সামনে এসেছে যা শুনে শিহরিত হচ্ছেন সকলেই।
মানুষ যে কতটা নিচে নামতে পারে তার স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে ওই ঘটনায়। জানা গিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুরে ১৩ বছরের এক নাবালিকাকে ৮০ জন মিলে ধর্ষণ করেছে। অভিযুক্তদের ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর এই ঘটনাই বর্তমান সমাজের জঘন্য চেহারা তুলে ধরেছে। মাত্র ১৩ বছর বয়সী নাবালিকার সাথে এমন আচরণ যে কোনো সভ্য সমাজের জন্য চরম কলঙ্ক। শাস্তির বিধানকে কার্যত বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই “নির্ভয়া”-র মতো ঘটনার প্রসঙ্গ দেশে প্রতিদিনই সামনে আসছে।
যে বয়সে শিশুরা শরীর, জীবন এবং সমাজ সম্পর্কে কিছুই বোঝেনা সেই বয়সেও লালসার শিকার হতে হয় তাদের। মূলত, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রের পতিতালয়ে মানুষরূপী নেকড়েদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ওই নাবালিকাকে। অন্ধ্র পুলিশ তাকে সেখান থেকে মুক্ত করে একটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি, সেই ৮০ জনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে যারা তাদের মেয়ের সমান বয়সী এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছে। আরও কিছু পলাতক আসামীদের খুঁজছে পুলিশ যাতে ওই নাবালিকাকে “ন্যায়বিচার” দেওয়া যায়। পুলিশ জানিয়েছে, আট মাস যাবৎ নাবালিকাটিকে ৮০ জনেরও বেশি ধর্ষণ করেছে।
বি.টেকের শিক্ষার্থীও জড়িত:
এছাড়াও, পুলিশসূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে একজন বি.টেকের ছাত্রও রয়েছে। এদিকে, ওই নাবালিকা তার সাথে ঘটে যাওয়া চরম নির্যাতনের পুরো ঘটনাটি পুলিশের কাছে বর্ণনা করেছে। যা শুনে পুলিশকর্মীরাও স্তম্ভিত হয়ে গেছেন।
কিভাবে পতিতালয়ে পৌঁছল সে?
প্রকৃতপক্ষে, সাবর্ণা কুমারী নামে একজন মহিলা ২০২১ সালের জুন মাসে করোনা মহামারীর সময়ে একটি হাসপাতালে নির্যাতিতার মায়ের সাথে বন্ধুত্ব করেছিলেন। এরপরে করোনার কারণে ওই নাবালিকার মা মারা যান। সেই সময়েই ওই মহিলা নাবালিকার বাবাকে না জানিয়ে তাকে নিয়ে পালিয়ে যান।
এদিকে, ২০২১ সালের আগস্টে, ওই নাবালিকার বাবা পুলিশের কাছে গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বর্তমানে মূল অভিযুক্ত সাবর্ণা কুমারীকে খুঁজছে পুলিশ। এই মামলায় প্রথম গ্রেফতার করা হয়েছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এছাড়াও, গত ১৯ এপ্রিল গুন্টুর পুলিশ একজন বি.টেক ছাত্র সহ আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে এবং নাবালিকাকে মুক্ত করে।
অগণিত প্রশ্নের উত্তর নেই:
উপরিউক্ত সকল অভিযুক্ত তাদের কর্মের জন্য হয়ত শাস্তি পাবে, কিন্তু অগণিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবেনা। এই জবাব পুলিশ, সরকার, সমাজ এবং অভিভাবকদের দেওয়া উচিত। প্রশ্ন হল, কোন হাত দিয়ে এই নাবালিকা পতিতালয়ে পৌঁছেছে? কার নির্দেশে পতিতালয় ব্যবসা হয়? পুলিশ ও প্রশাসন কি তাদের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে? যে দেশে দেব-দেবীর পূজা হয়, সেখানে আর কতকাল মহিলারা লালসার শিকার হবেন? নারী উন্নয়নের জন্য সকল প্রচার, বিভাগ ও সংগঠন কিভাবে এটা বন্ধ করবে?
কবে POCSO-তে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির মঞ্চে ঝোলানো হবে? সমাজের নৈতিক অবক্ষয় কীভাবে বন্ধ হবে? নির্যাতিতদের পুনর্বাসন হবে কীভাবে? তাঁরা কি সত্যিই আর কখনো এর শিকার হবে না? সর্বোপরি নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে এবং কবে বদলাবে? বর্তমানে এইসব প্রশ্নগুলি ভিড় করে এলেও উত্তর নেই কারুর কাছেই!