বাংলা হান্ট ডেস্ক: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যু নিয়ে রীতিমতো সরগরম গোটা রাজ্য। সমস্ত পক্ষের মধ্যেই এ বিষয় নিয়ে চলছিল বাকযুদ্ধ। কিন্তু আচমকাই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন।
সোমবার সন্ধ্যেবেলায় শহরের একটি ফাইভ স্টার হোটেলে এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্য করে বলেন, ‘উনি খুব দয়ালু, নরম মনের মানুষ। আমরা দু’জনেই শপথ নিয়েছি সংবিধান রক্ষায় কাজ করে যাব। রাজ্যকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাব।’ এই বণিকসভার বিষয়বস্তু ছিল ‘নারী ক্ষমতায়ন’, এ নিয়ে রাজ্যপাল বলেন, ‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। উনি ভালো কাজ করছেন।’
রাজ্যপালের এমন মন্তব্যে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘যত দিন যাবে উনি বুঝতে পারবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ইতিহাসের তাৎপর্য।’ রাজনৈতিক মহলের একাংশ আবার মনে করছেন, রাজ্যপালের মন্তব্যে চলতি বিতর্কে তাঁর দিক থেকে ইতি টানার প্রয়াস রয়েছে।
উল্লেখ্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নোংরা ঘটনা নিয়ে চড়া সুর বজায় রেখেছিলেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে ফিরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সকলের ধারণা সেই কারণেই তিনি এই ঘটনা নিয়ে কোনোরকম মুখ খোলেননি। কিন্তু মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় মন্তব্য অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং ভিন্ন ইঙ্গিত রয়েছে তাতে। পার্থ বাবু স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন যে রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীশ ধনকরের গতকাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় হঠাৎ চলে আসার ভূমিকা নিয়ে একেবারেই সন্তুষ্ট নন তিনি।
তিনি জানিয়েছেন, “আমরা সাংবিধানিক পদের নিরিখে রাজ্যপালকে অবশ্যই সম্মান করি, তাই আমরা আশা রাখি যে রাজ্যপাল গতকালের ঘটনায় উপাচার্য, ছাত্র-ছাত্রী অধ্যাপকদের পাশে অবশ্যই দাড়াবেন, আমরা অধ্যাপক ও ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে আছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টির নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করেছেন।”
এখানেই থেমে যাননি পার্থ চট্টোপাধ্যায় তিনি আরও জানিয়েছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভাঙচুর চালিয়েছে, এবং ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে তাদের শাস্তি অনিবার্য কোনভাবেই তাদেরকে নিস্তার দেওয়া হবে না। সেই সঙ্গে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয় এক স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতা প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। সেখানে উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া কখনোই পুলিশ ঢুকতে পারে না”
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে সাড়া না দিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে উদ্ধার করতে চলে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বিবৃতি দিয়ে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করল তৃণমূল কংগ্রেস। একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে রাজ্যপালের বক্তব্যও খণ্ডন করল শাসক দল।
তৃণমূল বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে,”এটা দুর্ভাগ্যজনক। রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজেপি নেতাকে উদ্ধার করতে চলে যান রাজ্যপাল। রাজ্য সরকারকে অবহিত না করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যাদবপুর গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যজনক একটা ঘটনা ঘটে বিজেপির ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে।রাজ্য পুলিশ বাইরে দাড়িয়ে ছিল। কিন্তু উপাচার্য সাহায্য না চাওয়ায় তারা ঢুকতে পারে নি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা না করেই রাজ্যপাল রওনা হন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।”