বাংলাহান্ট ডেস্কঃ বাংলার নববর্ষ শুরুর আগে নীলপূজা (Nil puja) বা নীলষষ্ঠী হল বাংলার হিন্দুসমাজের এক লৌকিক উৎসব। কথিত আছে এই দিনটি শিব-দুর্গার বিবাহ বা শিবের বিয়ে নামে পরিচিত। এইদিন হিন্দু রমণীরা নিজের সন্তানের মঙ্গল কামনায় এবং নীরোগ সুস্থ জীবন কামনা করে সারাদিন উপোস করে এই নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করেন। এই ব্রত প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তির চড়ক উৎসবের আগের দিন অর্থাৎ নববর্ষেরে একদিন আগে পালিত হয় নীলপূজা।
কথিত আছে পুরাকালে এক বামুন আর বামুনী ছিল। তারা তাঁদের সন্তানদের মঙ্গল কামনায় অতি ভক্তি করে সমস্ত বার-ব্রত পালন করত। কিন্তু তাদের একটা সন্তানও জন্ম নেবার পর বেঁচে থাকত না। একদিন তারা কাশীতে গঙ্গাস্নান করে, ঘাটের ওপর বসে মনের দুঃখে কাঁদছিল। তখন তাঁদের দেখে মা ষষ্ঠী বুড়ি বামনীর বেশ ধরে এসে তাদের সামনে আসেন এবং তাঁদের দুঃখের কথা জানতে চান। তখন বামন এবং বামুনী তার দুঃখের কথা জানালেন বুড়ি বামনীর বেশধারী মা ষষ্ঠীকে। বুড়ি বামনী তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোরা কি নীল ষষ্ঠী করেছিস?”। বামনী তার কথা না বুঝতে পেরে বলল, “সে আবার কি ব্রত মা? আমরা তো তা জানি না।”
তখন মা ষষ্ঠী তাঁদের বললেন, “সমস্ত চৈত্র মাস সন্ন্যাস ধর্ম পালিন করে শিব পুজো করবে। এবং তারপর সংক্রান্তির আগের দিন, সমস্ত দিন নির্জলা উপোস থেকে সন্ধ্যার সময় নীলাবতীর পুজো করবে। তারপর নীলকণ্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বালিয়ে মা ষষ্ঠীকে ভক্তিভরে প্রণাম করে তবে জল খাবে। ঐ দিনটিকে ষষ্ঠীর দিন বলা হয়। ওই দিন যারাই নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করে, তাদের ছেলে মেয়ের দীর্ঘায়ু হয়”। মা ষষ্ঠীর এই কথা শোনার পর তারা বাড়ি ফিরে গিয়ে নিয়ম মেনে নীল ষষ্ঠীর ব্রত করতে লাগল। তারপর থেকে তাঁদের সব সন্তানই সুস্থ এবং জীবিত থাকল। সেই থেকে সংসারের সকল স্ত্রীলোক অর্থাৎ মহিলারা তাঁদের সন্তান সন্ততির সুস্থ জীবন লাভের আশায় এই ব্রত পালন করে থাকেন।
প্রতি বছর এই নীল পূজারা আগে নীলসন্ন্যাসীরা ও শিব-দুর্গার সঙেরা পূজার সময়ে নীলের বেশে সেজে, ভগবানের গান বাজনার মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি ঘোরেন এবং ভিক্ষা সংগ্রহ করেন। এই নীলের গানকে বলা হয় অষ্টক গান। সারাদিন উপোস থাকার পর ঐদিন সন্ধ্যাবেলায় সন্তানবতী হিন্দু রমণীরা সন্তানের কল্যাণার্থে প্রদীপ জ্বালিয়ে শিবপূজা করেন। সারাদিনের উপবাস রেখে ভক্তিভরে শিবের পূজা করে উপবাস ভঙ্গ করেন।