বিদেশ থেকে দেশে ফিরে শুরু করলেন চাষের কাজ, এখন ইউরোপে রপ্তানি করছেন সবজি

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর দেশে ফিরে কৃষিকাজে (Farming) যোগ দিলেন এক ভারতীয় দম্পতি। ২০০৪ সালে ছেলে নবীনের জন্মের পর জয় ভাকাইল এবং তার পেশায় সেবিকা স্ত্রী দেশে ফিরে আসেন। কেরালায় ফিরে তারা তাঁদের পুরনো ব্যবসা কৃষিকাজ করতে শুরু করে দেন। এবং সিদ্ধান্ত নেন ইউরোপে আর ফিরে যাবেন না। তার ঠিক করেন এরপর থেকে তারা তাঁদের পিতৃভূমিতেই কৃষিকাজ করে দিন কাটাবেন।

krishi 6666

প্রথমে তাঁদের জমিতে রাবার চাষ করা হত। তবে এখন সেই জমিতে ভেঁদি, করলা ইত্যাদির পাশাপাশি সবজিও চাষ করতে শুরু করেন। এর পাশাপাশি তারা গরু, ছাগল ও মাছও পালন করতে শুরু করে। তারা এই জৈব ফসল বর্তমানে ইউরোপে রপ্তানি করে। এ বিষয়ে জয় জানান, ‘প্রথমদিকে আমি অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলাম। কারণ আমার চারপাশের লোকেরা বিশ্বাস করেনি যে এই পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের ক্ষমতা আমার ছিল। এর সাথে এই লোকেরা আরও বলেছিল, যে রাবার চাষ বাতিল করার জন্য আমি সবসময় আফসোস করব। তবে আজ আমি খুশি, কারণ আমি যে ঝুঁকি নিয়েছি তাতে আমি সফল হয়েছি’।

এই কৃষিকাজ করতে তার কাছে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ছিল না। জয় তাঁর সঞ্চয়ের ২ লক্ষ টাকা এবং কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সহায়তায় ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে তাঁর কাজ শুরু করেন। ১৪ একর জমিতে ফসল এবং ৫ একর জমিতে ভেন্ডি, করলা চাষ শুরু করেন। এছাড়াও চার একর জমিতে নারকেল গাছ রয়েছে এবং বাকী জমিতে বাড়ন্ত কন্দ ছাড়াও গরু-ছাগলের চারণভূমি করা হয়েছে।

krishi 4444

জয় জানান, তিনি ধীরে ধীরে তাঁর এই সবজি ইউরোপে রপ্তানি শুরু করে দেন। তাঁর জমিতে উৎপন্ন সবজির এক চতুর্থাংশ তিনি বিদেশে রপ্তানি করেন। বিশেষত বিদেশের বাজারে হলুদ, আদা, কাসাভায়ের চাহিডাঃ রয়েছে, যা জয়ের জমিতে উৎপাদিত হয়। জয় বলেন, “আমার কৃষিকাজ যখন প্রসারিত হতে শুরু করেছিল, তখন ষাঁড় এবং সারের দরকার ছিল। আমার বন্ধু ডাঃ কুরিয়াকোজে ম্যাথিউস, যিনি নিজেই একজন পশু চিকিৎসক ছিলেন, আমাকে ডেইরি ফার্ম শুরু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার বাড়ি কাছেই, তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে যখনই আমার প্রয়োজন হবে তিনি আমাকে গাইড করবেন এবং সহায়তা করবেন’।

আজ তাদের কাছে প্রায় ২৫ টি ছাগল এবং ১০ টি গোরু রয়েছে, যা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৯০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। এই প্রাণীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বর্জ্য, সার হিসাবে চাষে ব্যবহৃত হয় এবং একইভাবে সমস্ত বর্জ্য গাছ এবং পাতা পশুর খাবার হিসাবে দেওয়া হয়। বিগত ৬ বছর ধরে জয়ের চাষের সাথে জড়িত ডাঃ কুরিয়াকোস থমাস ব্যাখ্যা করেছেন, “জয় প্রথম থেকেই কৃষিতে আগ্রহী ছিল। এই খামারগুলি এতটা সাফল্য পেতে সক্ষম হয়েছিল, কারণ তারা সবসময় ফসলের উপকারের চেয়ে ফসলের গণগতমানের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। তিনি আমাদের পাড়ার নতুন কৃষকদের থেকেও কৃষি কাজে শিক্ষা নিয়ে থাকেন’।

krishi 333

 

জয় জানান, “কৃষি ভবন এবং কৃষিমূলি কেন্দ্র থেকে অনেক শ্রমিক প্রায়শই মাঠে আসেন এবং ভাল ফসলের জন্য আমাকে গাইড করেন। আমাকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কোর্স করার সুযোগও দেওয়া হয়েছিল, যাতে আমি আমার জ্ঞান আরও বাড়িয়ে তুলতে পারি এবং একই সাথে কৃষির সাথে সম্পর্কিত আমার বৈজ্ঞানিক বোঝাপড়া আরও উন্নত করতে পারি’। এছাড়াও কৃষিকাজের পাশাপাশি জয়ের তৈরি নার্সারি থেকে প্রচুর মানুষ গাছ পালা সংগ্রহ করতে পারেন।


Smita Hari

সম্পর্কিত খবর