সুটকেসে উপর ঘুমিয়ে পড়া ক্লান্ত শিশুকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিক মা

বাংলাহান্ট ডেস্কঃ ছোট দুটো পা আর যেন চলতে চায় না। ক্লান্ত শরীর দু’চোখে ঘুম জড়িয়ে এসেছে। পথ চলাটা যেন ক্রমশই কষ্টকর হয়ে উঠছে। বাধ্য হয়ে মায়ের সুটকেসে ওপরে শুয়ে পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। সামনে দীর্ঘ পথ চলা বাকি। আর মা সেই চাকাওয়ালা সুটকেসে দড়ি বেঁধে এগিয়ে চলেছেন দলের সঙ্গে। ভারী সুটকেস আরও ভারী হয়ে উঠেছে সন্তানের ভারে। তবুও তাকে টেনে নিয়ে প্রাণপণ গতিতে হাঁটতে হচ্ছে ওই মহিলাকে। কেননা পিছিয়ে পড়লে দলছুট হয়ে যেতে পারেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থার আরও এক নিদারুণ ছবি ফুটে উঠল এই দৃশ্যের মাধ্যমে। উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) আগ্রায় একটি ছোট দলের অংশ ছিলেন এই মহিলা ও তাঁর শিশু। কোথায় চলেছেন তাঁরা? প্রশ্নের উত্তরে ওই মহিলা জান‌াচ্ছেন, ‘‘ঝাঁসি।”

Coronavirus slider

কিন্তু রাজ্য সরকার লকডাউনের সময়ে পরিযায়ীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা তো করেছে। কেন তাঁরা সেই বাসে উঠছেন না? উত্তর মেলে নাই। হাঁটতে হাঁটতে এতই ক্লান্ত মহিলা যে কথা আর আসে না মুখে। এদিকে দল যে এগিয়ে চলেছে। সুটকেসে ঘুমন্ত শিশু। অসহায় মা কেবল গতি বাড়াতে চান। ভারী হয়ে আসতে থাকে পা।

projai 1

 

দলটি হাঁটা শুরু করেছে পঞ্জাব (punjab) থেকে। যেতে হবে ৮০০ কিমি দূরের ঝাঁসিতে। মার্চের শেষ থেকে দেশব্যাপী জারি হওয়া লকডাউনের ফলে চাকরি হারিয়ে খাদ্য-বাসস্থানের অভাবে পায়ে হেঁটে নিজের রাজ্যে ফিরতে বাধ্য হওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের যে কী পরিমাণ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তার নানা দৃষ্টান্ত গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সামনে এসেছে। সকলে অবশ্য হাঁটছেন না। কেউ কেউ সাইকেলে, কেউ বা ট্রাকে করে পাড়ি দিচ্ছেন দীর্ঘ দীর্ঘ পথ। এই দৃশ্য সেই তালিকায় নয়া সংযোজন।

corona 2004110303 20200412014705

চলতে চলতে পথে নুইয়ে পড়েছে কত শরীর। দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাতে হয়েছে। তবুও থামা নেই। জীবন যায় যাক, বাড়ি ফিরতে মরিয়া পরিযায়ীদের নামতেই হয়েছে পথে। বাস বা ট্রেন চালু করা হলেও যাঁরা এরই মধ্যে পথে নেমে পড়েছেন, তাতে তাঁদের বিশেষ লাভ হয়নি। পাশাপাশি অনেকের কাছেই টিকিটের দাম সাধ্যাতীত।

rss 2 1

মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে একদল পরিযায়ী শ্রমিককে দেখা গিয়েছে, যাঁরা লকডাউনের ফলে বেরিয়ে পড়েছেন রাস্তায়। ইঁট ভাঁটার এই কর্মীরা পরিবার-পরিজনদের নিয়ে প্রয়োজনে সাইকেলে চেপেই চেষ্টা করছেন বাড়ি ফিরতে। এক ভদ্রলোককে দেখা গেল দুই সন্তানকে সাইকেলে বসিয়েছেন। সেই সঙ্গে সাইকেলে বেঁধে নিয়েছেন বিছানাও! সামনে ৫০০ কিমিরও বেশি বড় পথ। কঠিন যাত্রা। তবু পেরোতই হবে পথ। তাঁর মতো করেই ভারতের অসংখ্য পরিযায়ীরাই নেমে পড়েছেন রাস্তায়। লকডাউনের স্থবিরতাকে পেরিয়ে বাড়ি ফেরা— তাঁদের স্বপ্ন বলতে আপাতত এটুকুই।

সম্পর্কিত খবর