বাংলা হান্ট ডেস্ক: কসবার ল’কলেজের ছাত্রী ধর্ষণের ( Kasba Rape Incident) ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে রাজ্য রাজনীতির পারদ চড়েছে। এই ঘটনায় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ( Kalyan Banerjee) মন্তব্যে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রবিবার এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি নারীবিদ্বেষী নন। শুধুমাত্র একজন নারীকে ঘৃণা করেন। অকপটে তিনি সেই নারীর নামও জানান। তিনি আর কেউ নন, কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র ( Mahua Moitra) ।
মহুয়াকে ব্যক্তিগত আক্রমণ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ( Kalyan Banerjee)
সাউথ কলকাতা ল’কলেজ কাণ্ড নিয়ে শ্রীরামপুরের সাংসদ তথা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘একজন বন্ধু যদি তাঁর বান্ধবীকে ধর্ষণ করে, পুলিশ সেখানে কী করতে পারে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতর এই ধরণের ঘটনা ঘটলে, সেখানে কি পুলিশ থাকবে? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো আর পুলিশ দাঁড় করানো যায় না। সহপাঠী অথবা সহকর্মীরাই যেখানে অপরাধ করছে, সেখানে দায়িত্ব কার?’ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন মন্তব্য নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দেয় রাজনৈতিক মহলে। এই বিষয়ে দল স্পষ্ট জানিয়েছে, শ্রীরামপুরের সাংসদের বক্তব্যের সঙ্গে তারা একমত নন।
যদিও, এর আগে বিতর্কিত মন্তব্য করে নজরে এসেছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ। পাশাপাশি, কসবা কাণ্ডে বিতর্কিত মন্তব্য করতে দেখা যায় বিধায়ক মদন মিত্রকেও ( Madan Mitra)। এই বিতর্কিত মন্তব্যের ফলে ইতিমধ্যেই দূরত্ব তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই মন্তব্য ‘ ব্যক্তিগত’ । তৃণমূল কংগ্রেস তাদের মন্তব্যের সঙ্গে একমত নয়। এমনকি তৃণমূলের সমাজমাধ্যমে পোস্টের পর আইনজীবী-সাংসদকে দমানো যায়নি। তিনি জোর গলায় বলেছেন, “হাজার বার বলব”।
আরও পড়ুনঃ ‘তৃণমূলের অপরাধীরাই সরকার ও দল পরিচালনা করছে’! কসবা কাণ্ডে মদনের মন্তব্য নিয়ে বিস্ফোরক দিলীপ
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মদন মিত্রের এই বিবৃতির পর কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra) দু’জন নেতার নাম না নিয়েই ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। মহুয়ার ( Mahua Moita ) সে কটাক্ষের জবাবে কল্যাণ জানিয়ে দিলেন, তিনি নারী বিদ্বেষী নন। তিনি একমাত্র মহুয়াকেই ঘৃণা করেন। তিনি কেন তাঁকে ঘৃণা করেন সেই বিষয়েও পাঁচটি কারণ দেখালেন।
প্রসঙ্গত, মহুয়া কারো নাম করে পোস্ট করেননি। তবে , কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় ( kalyan Banarjee) ও মদন মিত্রকে ( Madan Mitra) নিয়ে তৃণমূলের ( TMC) পোস্টটি শেয়ার করে সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘ভারতে নারীবিদ্বেষ দলের গণ্ডিতে আটকে নেই। কিন্তু তৃণমূলকে অন্যদের থেকে আলাদা করে একটাই বিষয়, আমরা এই ধরনের বিরক্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ করি, তা সে যে-ই করুন না কেন।’’ এ নিয়ে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফ থেকে কল্যাণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। শুনেই তিনি বলে ওঠেন, ‘‘দেড় মাসের হানিমুন শেষ করে দেশে ফিরেই কি ওঁর আমার পিছনে লাগা শুরু হল? আমি সব নারীকে সম্মান করি, কিন্তু মহুয়া মৈত্রকে ঘৃণা করি”।
এখানেই না থেমে ‘নারীবিদ্বেষ’ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মহুয়াকে কটাক্ষ করে কল্যাণ বলেন, ‘আমি নারীবিদ্বেষী? যেখানে মহুয়া এক মহিলার ৪০ বছরের বিবাহিত জীবন নষ্ট করেছে। এমনকি ওই মহিলাকে কষ্ট দিয়ে সেই পুরুষকেই বিয়ে করেছেন। আর আমি নারীবিদ্বেষী”?
আরও পড়ুনঃ ৫% হারে বেতন বাড়াল রাজ্য, কবে থেকে মিলবে? জারি করা হল বিজ্ঞপ্তি
কল্যাণের আরও অভিযোগ, মহুয়া নিজের কেন্দ্রে অন্য কোনও মহিলা নেত্রীকে উঠতে দেন না। সাংসদের আরও দাবি, ২০১১ সালে এক বর্ষীয়ান মহিলা সাংসদের লোকসভার অধীন একটি বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মহুয়াকে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই মহিলা সাংসদ মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, তিনি মহুয়ার দায়িত্ব নিতে পারবেন না।
শ্রীরামপুরের সাংসদ বলেন, কালীগঞ্জ উপনির্বাচনের প্রচারের জন্য তাঁকে যেতে বলেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেখানেও বাধা সাধেন মহুয়া। এত কীসের ভয়? প্রশ্ন তুলেছেন প্রবীণ সাংসদ-আইনজীবী।
উল্লেখ্য, এই প্রথম নয়, এর আগেও সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছে কল্যাণ (Kalyan Banerjee)-মহুয়ার ‘অম্লমধুর’ সম্পর্কের কথা। মাস দুয়েক আগেই এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। কসবা কাণ্ডের আবহে ফের একবার তা চর্চার কেন্দ্রে চলে এল। রাখঢাক না করেই কল্যাণ বললেন কৃষ্ণনগরের সাংসদকে তিনি ‘ঘৃণা’ করেন। পাল্টা কোনও জবাব আসে কিনা সেটাই দেখার।