বাংলাহান্ট ডেস্কঃ করোনা সংক্রমণ চলেছে দেশজুড়ে,আর একে ঠেকাতে তিন মাসের বেশী সময় ধরে চলছে লকডাউন। যাতে শতশত মানুষ হারিয়েছে তাদের কর্মসংস্থান। এই কর্মসংস্থানহীন মানুষের ঘরে নেমে এসেছে কষ্টের চিত্র। যেখানে দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করা তাদের কাছে কষ্টদায়ক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আবার হয়তো অনেকে বাড়িতে খাবারই জুটছে না। আর এই সকল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেন এক শিক্ষক দম্পতি ৷ ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানে (Burdwan)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় তিন মাস হতে চলল, বন্ধ রয়েছে স্কুল ৷ যেটুকু ক্লাস হচ্ছে, তা ওই অনলাইনে ৷ কিন্তু প্রতি মাসে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকছে শিক্ষকদের বেতন ৷ তাই বেতনের একটা বড় অংশ মানুষের সেবার নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন এই দম্পতি ৷ অন্ডালের হাইস্কুল পাড়ার বাসিন্দা শোভন সরকার ও তাঁর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা দু’জনেই প্রাথমিক স্কুলে পড়ান৷ শোভনবাবু বর্ধমানের জিয়ারা স্কুলের শিক্ষক। আর প্রিয়াঙ্কা পড়ান অন্ডালের দামোদর কলোনির অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। লকডাউনের মধ্যে এক পড়ুয়ার খবর নিতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কার চোখে পড়ে মানুষের অসহায়তার ছবি ৷ ঠিক করেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন ৷ নিজেদের বেতনের টাকায় পৌঁছে দেবেন খাদ্য সামগ্রী ৷
তিনি আরও জানান, লকডাউনের শুরুতে তাঁর স্কুলের এক পড়ুয়ার বাড়ি খোঁজ খবর নিতে গিয়েছিলেন তিনি৷ সেখানে গিয়ে বোঝেন কতটা অসহায়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা ৷ এক কাপ চা করে দেওয়ারও ক্ষমতাও নেই তাঁদের ৷ বাড়িতে এসে ঘটনাটা তাঁর স্বামীকে জানান ৷ এর পরই দু’জনে ঠিক করেন দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াবেন ৷ এপ্রিল-মে মাসে প্রথমে রান্না করা খাবার বিলি করেছিলেন তাঁরা ৷ কিন্তু পরে প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী বিতরণের জন্য কুপোনের ব্যবস্থা করেন শোভন ও প্রিয়াঙ্কা ৷
তাঁরা জানান, দুই রকম কুপোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ একটি ৫০০ টাকার ও অন্যটি, ১০০০ টাকার৷ প্রয়োজন অনুযায়ী দুঃস্থ পরিবারগুলির হাতে এই কুপোন তুলে দিচ্ছেন শোভন-প্রিয়াঙ্কা ৷ যা দিয়ে সংসারের জন্য চাল, ডাল, তেন, নুন, মাশলাপাতি কিনছেন গরিব মানুষগুলো৷ এর জন্য অন্ডালের একটি মুদি দোকানে ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়ে রেখেছেন এই দম্পতি ৷ কুপোন নিয়ে এই দুঃস্থ মানুষগুলি সোজা চলে যাচ্ছেন সেই মুদি দোকানে৷ কুপোন দেখিয়ে নিয়ে আসেন প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ৷ ১৫০টি কুপোন তৈরি করেছেন তাঁরা৷ গত তিন দিনে ১২৮ জনের মধ্যে এই কুপোন বিলি করা হয়েছে ৷ নিজেরাই ঘুরে ঘুরে বিলি করছেন কুপোন ৷
এই সাহায্য পেয়ে খুশি স্থানীয়রা৷ এই ভাবে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই তাঁদের বেতনের পুরো টাকা দিয়ে যে ভাবে গরিব মানুষদের সাহায্য করছে, সেটা দেখে তাঁরা খুব খুশী ৷ শোভন বলেন, প্রিয়াঙ্কা যেদিন বলল, তাঁর এক ছাত্রের বাড়িতে সামান্য চা কেনারও পয়সা নেই, সেদিনই ঠিক করি আমরা আমাদের বেতনের টাকা দিয়ে মানুষকে সাহায্য করব৷ তাছাড়া তিন মাস স্কুলেও যেতে হচ্ছে না ৷ বিনা পরিশ্রমেই টাকা পাচ্ছি ৷ তাই একটা ভালো কাজে এই টাকা খরচ করলে ক্ষতি কিসের? গ্রামবাসীরা তাদের মাথায় রেখেছে আশীর্বাদের হাত।