বাংলা হান্ট ডেস্কঃ করোনাকালে স্কুল, কলেজ সব বন্ধ ছিল। ধীরে ধীরে সেগুলো খুলছে। তবে স্কুল বন্ধ থাকলেও অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে চলছিল পড়াশুনা। তবে অনলাইনে পড়াশুনার সাধ্যতো আর সবার নেই। যার বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফোরায়, সে দামি মোবাইল আর ইন্টারনেট ব্যবহার করবে কি করে? অগত্যা বাড়িতে বসে বই পড়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না সেই অভাবি পড়ুয়াদের।
সেরকমই এক অভাবি পড়ুয়ার দেখা মিলল বর্ধমানের মেমারির খাঁড়গ্রামে। সুমন ঘোষ নামে সপ্তম শ্রেণীর এই পড়ুয়ার অনলাইনে পড়াশুনা করার সামর্থ্য নেই। আরেকদিকে, বাড়ির একমাত্র উপার্জনকারী মানুষ অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। একদিকে পড়াশুনা চালাতে হবে, আরেকদিকে সংসারের হালও ধরতে হবে। আর সেই কারণে ভাঙা সাইকেলের পিছনে ক্রেট বেঁধে মিস্টি বিক্রি করতে নামল সুমন।
মেমারির খাঁড়গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলে পড়ে সুমন। বাড়িতে অসুস্থ বাবা, মা আর রয়েছে তিন বছরের ছোট বোন। বাবা অ্যাম্বুলেন্স চালাতেন। কিন্তু ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ওনার শরীরে একের পর এক রোগে বাসা বাঁধে। এরপর বাড়ির একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তি শরৎ ঘোষ শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এরপর সুমন তাঁর মা নয়নমণিদেবীকে বাড়িতে মিষ্টি বানাতে বলে। সেই মিষ্টি বিক্রি করেই সংসার আর পড়াশুনার খরচ চালাচ্ছে সুমন।
সাইকেলের পিছনে ক্রেট বেঁধে সকাল সকাল মিষ্টি, সন্দেশ আর দই নিয়ে খাঁড়গ্রাম, পালশিট, বেগুট, করন্দা, ভৈটার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সুমন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মিষ্টি বিক্রি করে সে। আর কোথাও কোনও মেলা বসলে, সেখানেই ভ্রাম্যমান দোকান নিয়ে হাজির হয় সুমন। সপ্তম শ্রেণীর এই পড়ুয়া জানায়, মিষ্টি বিক্রি করে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে সে।
সুমন জানায়, সাইকেল নিয়ে মিষ্টি বিক্রি করতে যাওয়ার আগে প্রাইভেট টিউটরের কাছে গিয়ে আগে পড়াশোনা সেরে নেয় সে। সুমনের বাবা শরৎবাবু জানান, ‘ছেলের বয়স কম হলেও বুদ্ধি অনেক। ওকে উচ্চ শিক্ষিত করার অনেক ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এই অভাবের সংসারে সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়া দূরের কথা। এখন ওকেই সংসারের হাল ধরতে হচ্ছে।” সুমন যেই স্কুলে পড়ে, সেখান থেকে জানা যায় যে, গত বছর টাকার অভাবে তাঁকে ভর্তি করতে পারেনি শরৎবাবু। তবে স্কুল তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে ভর্তির ফি’র ব্যবস্থা করে দেয়।
জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির উপর দিয়ে ভেসে চলছে বিমান, তরুণীর ভিডিও দেখে হতবাক নেটমাধ্যম!