বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আপনার বাড়িতে থাকা কোনও দেব-দেবীর প্রতিমা ভেঙে যায়, তবে আপনি অপ্রীতিকর কোনও কিছুর সম্ভাবনা নিয়ে আঁতকে ওঠেন। শাস্ত্রে ভেঙে যাওয়া মূর্তির পুজো করা নিষেধ আছে, কিন্তু মধ্যপ্রদেশের সতনা জেলার বীরসিংহপুরে ভেঙে যাওয়া গোবিনাথ শিবলিঙ্গকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধার সঙ্গে পুজো করা হয়। এর পিছনের ইতিহাসও অনেক মজাদার।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রদেশের সতনা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দূরে আছে এই বীরসিংহপুর গ্রাম।। এই গ্রামের একটি পুকুরের ধারে আছে গোবিনাথ শিবমন্দির। ঐতিহাসিক কাহিনী অনুযায়ী, এই গ্রাম এক কালে দেবপুর নগরী বলে পরিচিত ছিল। এই নগরীর রাজা ছিলেন বীর সিংহ। তিনি উজ্জয়নের মহাকালের বড় ভক্ত ছিলেন। রাজা বীর সিংহ রোজ মহাকালের দর্শনের জন্য বীরসিংহপুর থেকে উজ্জয়ন যেতেন। কিন্তু বয়স বাড়ার পর রোজ উজ্জয়নে যেতে পারতেন না তিনি।
এরপর তিনি ভাবেন যে, মহাকাল যদি দেবপুর নগরে বিরাজমান হন তাহলে রোজ ওনার দর্শন করতে পারবেন তিনি। শোনা যায় যে, মহাকাল রাজা বীর সিংহের ভক্তিতে এতটাই প্রসন্ন হয়েছিলেন যে, দেবপুর নগরী যেটি এখন বীরসিংহপুর হিসেবে খ্যাত, সেখানে তিনি গোবিনাথ শিবলিঙ্গ রুপে প্রকট হন।
এই মন্দিরের সঙ্গে আরও একটি কাহানি প্রচলিত আছে। মুঘল সাম্রাজ্যের অত্যাচারী শাসক ঔরঙ্গজেব যখন এই মন্দিরের খ্যাতি সম্বন্ধ্যে জানতে পারেন, তখন তিনি নিজের সেনা নিয়ে বীরসিংহপুরে পৌঁছান। তিনি নিজের ধারালো তরোয়াল দিয়ে শিবলিঙ্গকে দুই টুকরো করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শিবলিঙ্গ তিন টুকরো হয়ে যায়।
ঔরঙ্গজেব সেই সময় গোটা ভারতে মন্দির ভাঙার কাজ করছিল। গোবিনাথ শিবলিঙ্গের উপরে পাঁচটি হাড়ির মতো ছিল। ঔরঙ্গজেব যখন তরোয়াল দিয়ে শিবলিঙ্গকে ভাঙতে গিয়েছিল, তখন সেই হাড়ি গুলোও ভেঙে গিয়েছিল। প্রথম হাড়ি থেকে দুধ, দ্বিতীয়টি থেকে মধু, তৃতীয়টি থেকে রক্ত, চতুর্থটি থেকে গঙ্গাজল আর পঞ্চম এবং শেষ হাড়ি থেকে মৌমাছি বের হয়। মৌমাছি গুলো ঔরঙ্গজেবের উপর আক্রমণ করে দেয়। আর ঔরঙ্গজেব তখন সেই মন্দির থেকে পালাতে বাধ্য হয়।
ঔরঙ্গজেব তরোয়াল দিয়ে যেই শিবলিঙ্গটিকে ভাঙার চেষ্টা করেছিল, সেই দাগ এখনও শিবলিঙ্গের উপরে আছে। দেশের কোনা কোনা থেকে মানুষ মহাশিবরাত্রি আর শ্রাবণ মাশে মহাদেবের দরহসনের জন্য গোবিনাথ ধামে পৌঁছান। মন্দিরের পাশের পুকুর নিয়ে বলা হয় যে, এই পুকুরে সারা বছরই জল থাকে। এই পুকুর উজ্জয়নের ক্ষিপ্রা নদীর সঙ্গে যুক্ত আছে। ভগবান শিবের কৃপায় এই পুকুর কখনো শুকিয়ে যায় না।