বাংলা হান্ট ডেস্ক: জীবনের লড়াইটা সকলের কাছে সমান নয়! এমন অনেকেই আছেন যাঁরা জন্মলগ্ন থেকেই করে চলেছেন এক অসম লড়াই। যেখানে সাহস এবং অদম্য মনের জোরে সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে সাফল্যেকে ছিনিয়ে আনেন তাঁরা। জীবনের প্রতিটি সমস্যাকেই হাসিমুখে পার করে তাঁরা রচনা করেন এক নতুন গল্প! যে গল্প সাক্ষী থাকে এক কঠিন লড়াইর। ঠিক সেইরকমই এক গল্পের নায়ক হলেন তেজিন্দর মেহরা।
জন্ম থেকেই একটি হাত নেই তেজিন্দরের। যে কারণে মাত্র কুড়ি হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁর বাবা-মা বিক্রি করে দিয়েছিলেন তাঁকে। অকল্পনীয় হলেও ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে ঘটেছিল এই ঘটনা! সেখান থেকে তাঁকে কোনোমতে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তাঁর মাসি। দীর্ঘ লড়াইর পর তিনি আজ “চিকেন টিক্কা কিং” নামে সকলের কাছে পরিচিত! পাশাপাশি, তাঁর জীবনযুদ্ধের কাহিনিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে নেটমাধ্যমে। যা প্রশংসা কুড়িয়েছে সকলের।
তেজিন্দরকে ছোট থেকেই খুব কষ্টের সাথে মানুষ করেছিলেন তাঁর মাসি! আর্থিক সঙ্গতি না থাকলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন তেজিন্দর। যদিও, পরে পড়াশোনা ছেড়ে পরিবারের খরচ জোগাতে কাজ খুঁজতে শুরু করেন তিনি। চাকরি খোঁজার পাশাপাশি ব্যায়ামের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন তেজিন্দর। প্রথমে সরকারি জিমে যোগ দিলেও কিছুদিন পর ব্যক্তিগত জিমে যাওয়া শুরু করেন তিনি। এভাবেই শুরু হতে থাকে তাঁর জিমের কেরিয়ার!
ওই সময়ে তাঁর কোচ দীনেশ ২০১৬ সালে তেজিন্দরকে মিস্টার দিল্লি প্রতিযোগিতায় নাম নথিভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তেজিন্দর সেখান নিজের নাম নথিভুক্ত করেন এবং জয়লাভ করেন। শুধু তাই নয়, তেজিন্দর ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে ধারাবাহিকভাবে সেটি জয়লাভ করেন।
তবে, বাড়ির আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলেও জিমে তিনি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন। যখন সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে, তখন তেজিন্দর ফিটনেস প্রশিক্ষকের ভূমিকায় প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত আবারও তার আর্থিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে যখন লকডাউনে সবকিছু থমকে যায়।
এদিকে, এই লকডাউনের সময়েও, তেজিন্দর সাহস হারাননি! লকডাউনের শেষের পথে তিনি তাঁর প্রশিক্ষকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়ে দিল্লিতে একটি খাওয়ার দোকান চালু করেন। তেজিন্দরের এই ব্যবসায়িক পদ্ধতিটি দারুণভাবে সফলতা পায়।
তেজিন্দর তাঁর স্টলে হাফ প্লেট চিকেন টিক্কা ১৫০ টাকায় এবং ফুল প্লেট চিকেন টিক্কা ২৫০ টাকায় বিক্রি করতে থাকেন। শুধুমাত্র একটি হাত দিয়েই দোকান পরিচালনার মতো কঠিন কাজ সামলান তিনি। পাশাপাশি, তাঁর দোকানে ক্রমশ বাড়তে থাকে ভিড়ও! তবে, বর্তমানে, দিল্লিতে ক্রমবর্ধমান করোনার কারণে তাঁর ব্যবসা কিছুটা হলেও প্রভাবিত হয়েছে। তবে, তিনি আশাবাদী যে খুব শীঘ্রই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এবং তাঁর ব্যবসা আবারও হিট হবে।