আবর্জনা সংগ্রহের কাজ করেন বাবা, ছেলে এক চ্যান্সেই পাশ করল AIIMS-র পরীক্ষা, হবে ডাক্তার

বাংলা হান্ট ডেস্ক: অদম্য জেদ, ইচ্ছে এবং লক্ষ্য পূরণে স্থির থাকলেই পার করা যায় হাজারও প্রতিবন্ধকতা! এমনকি, মেধার কাছে হার মেনে যায় অভাবও। আমাদের চারপাশেই এমন অনেকে রয়েছেন যারা পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে, কঠোর পরিশ্রম করে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার রাস্তা ঠিক খুঁজে নেন। এই প্রতিবেদনে ঠিক এমনই একজনের কথা আপনারা জানতে পারবেন।

ছোট থেকেই আশারাম চৌধুরী বড় হয়েছেন অভাবকে সঙ্গে করে। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকার কারণে কষ্টের মধ্যেই চালিয়ে যেতে হয়েছে পড়াশোনা। আশারামের বাবা বর্জ্য নিষ্কাশনের কাজ করেন। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে আশারামের বাবাকে কখনও শ্রমিকের কাজ আবার কখনও কুলির কাজও করতে হয়েছে।

বাবার কাজে সাহায্য করতে হাত লাগাতেন আশারামও। অভাবের সাথে রীতিমতো চোখে চোখ রেখে লড়াই করে আজ আশারাম পৌঁছেছেন তাঁর লক্ষ্যে। গন্তব্যের কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেওয়ার শেষে তিনি প্রথমবারেই ডাক্তারি পরীক্ষায় পাশ করে হারিয়ে দিয়েছেন সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকেই!

একদম ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন আশারাম। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েরা যাতে দুপুর বেলায় খাওয়ার খেতে পারে সেই কারণেই আশারাম এবং তাঁর বোনকে বিদ্যালয়ে পাঠান তাঁর বাবা। বুদ্ধিমান এবং পড়াশোনায় তুখোড় হওয়ার জন্য গ্রামের বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরে আশারামকে নবোদয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তাঁর শিক্ষকরা। পরবর্তীকালে নবোদয় বিদ্যালয়েই দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি।

এদিকে, ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তাঁর প্রথম থেকে না থাকলেও একটি ঘটনার পরই তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। একবার আশারামের শরীর খারাপ হলে তাঁর বাবা তাঁকে এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। ওই চিকিৎসক তাঁর বাবার কাছ থেকে ৫০ টাকা ফি নেন। যেটা ছিল আশারামের বাবার সারাদিনের উপার্জন! আর এই ঘটনাই গভীরভাবে নাড়া দেয় তাঁকে। তারপর থেকেই তিনি ডাক্তার হওয়ার লক্ষ্য স্থির করে ফেলেন।

ওই সময়ে, তাঁর পরিবারের বিপিএল কার্ড তৈরি করা হয়েছিল যার সাহায্যে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ সুবিধা পান। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে AIIMS-এর পরীক্ষায় সফল হন আশারাম। বর্তমানে তিনি যোধপুর থেকে এমবিবিএস করছেন। নিউরোলজিতে মাস্টার্স করে নিউরোসার্জন হতে চান তিনি। তাঁর এই অভাবনীয় সাফল্যের জন্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী “মন কি বাত” অনুষ্ঠানে আশারামের প্রশংসা করেছিলেন।

মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিব রাজ সিং চৌহানও তাঁর প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন যে আশারামের পড়াশোনার জন্য কোনো টাকা লাগবেনা এবং তাঁর পরিবারের জন্য বাড়ির সুবিধাও দেওয়া হবে। পাশাপাশি, রেড ক্রস সোসাইটির পক্ষ থেকে, ডঃ শ্রীকান্ত পান্ডে আশারামকে তাঁর এই সাফল্যের জন্য ২৫ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।

IMG 20220106 192959

এই প্রসঙ্গে আশারাম জানিয়েছেন যে, “আমার জীবনটা আর্থিক সীমাবদ্ধতায় কেটেছে, কিন্তু আমি কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা এবং বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখেছি। এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র আমার বাবা রঞ্জিত চৌধুরীর কারণে। আমার বাবা রাস্তা থেকে ব্যাগ, খালি বোতল এবং আবর্জনা সংগ্রহ করে সংসার চালিয়েছেন এবং আমার অন্যান্য ভাই-বোনদের শিক্ষিত করেছেন। তিনি ক্ষেতে মজুরের কাজও করেছেন, কিন্তু সাহস হারাননি এবং আমাদের সকলের চেতনা বজায় রেখেছেন।”

তিনি আরও বলেন যে,”আমাদের পরিবারের কোনো জমিজমা নেই। বিজয়গঞ্জ মান্ডি নামে একটি গ্রামে, আমাদের একটি মাত্র কুঁড়েঘর আছে। সেখানে কোন শৌচাগার নেই এবং বিদ্যুৎ সংযোগও নেই। আমার মা একজন গৃহবধূ। ২০১৯ -এর মে মাসে অনুষ্ঠিত AIIMS-এর পরীক্ষায় আমি ওবিসি বিভাগে নির্বাচিত হয়েছিলাম। তাতে আমি ১৪১ তম স্থান পেয়েছি। আমি তারপরে NEET-এর পরীক্ষাতেও সফলতা পেয়েছি। ওই পরীক্ষায় ওবিসি বিভাগে ৮০৩ তম স্থানে আমার নাম ছিল।” এদিকে, আশারামের এই স্বপ্নপূরণের কাহিনি সামনে আসতেই তাঁকে শুভকামনা জানিয়েছেন সবাই। পাশাপাশি, তাঁর জীবনযুদ্ধের এই লড়াইকে “স্যালুট” জানিয়েছেন সকলেই।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর