‘স্বচ্ছ-অহিংস রাজনীতি শেখাবে এই বই”, নিজের জীবনী প্রকাশের পর বড় দাবি অনুব্রতর

বাংলাহান্ট ডেস্ক : প্রকাশিত হল বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডলের জীবনী। তাঁর জীবন নিয়ে লেখা এই বইয়ের নাম ‘খেলা হবে’। মঙ্গলবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রকাশিত হল বইটি। বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বয়ং অনুব্রত মন্ডল ছাড়াও রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।

কিন্তু বইয়ের নাম ‘খেলা হবে’ কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে কার্যতই অকপট অনুব্রত জানান, ‘যে যাই বলুক না কেন ওই স্লোগান আমার। ২০১৭ সালে শিবতলা মাঠের জনসভায় প্রথম আমি এই স্লোগান ব্যবহার করি। তারপর একুশের বিধানসভা নির্বাচনের সময় মুখ্যমন্ত্রী ব্যবহার করেন সেই স্লোগান।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ভাইরাল হয় এই স্লোগান। ‘খেলা হবে’কে হাতিয়ার করেই রাজ্যের দরবারে লড়েছিলেন মমতা। বর্তমানে রাজ্যের গন্ডি পেরিয়ে দিল্লির পথে এই স্লোগান। যদিও তখন এই স্লোগানটিকে নিজের বলে দাবি করেছিলেন যুব তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য।

বইয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ভিতরে কী আছে পুরোটা আমিও জানি না। আমি তো লিখিনি তাই পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে আমার বেড়ে ওঠা, রাজনীতি, লড়াই সংগ্রাম এগুলোই আছে’। ‘এই বই পড়ে সৎপথে স্বচ্ছ অহিংস রাজনীতি কীভাবে করতে হয় তাই শিখবেন তৃণমূল কর্মীরা’।

পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বিতর্কিত নেতাদের মধ্যে অন্যতম অনুব্রত মন্ডল। তাঁর বিরুদ্ধে অশান্তি, দাঙ্গা, সন্ত্রাসের ভুরি ভুরি অভিযোগ বিরোধীদের। তাঁকে ‘গুন্ডা’ বলে দাগতেও পিছপা হয় না বিরোধী শিবির। অনুব্রত মন্ডলের প্রতিটি মন্তব্য এবং স্লোগানই কার্যতই ভাইরাল। বিতর্কের পাহাড় চূড়ায় বসেও খুব একটা হেলদোল দেখা যায় না এই দাপুটে নেতার মধ্যে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে নির্দল প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে তাঁর বক্তব্য ‘প্রয়োজনে পুলিশকে বোম মারুন’ কিংবা ‘গুড় বাতাসা’, ‘চড়াম চড়াম’, ‘নকুল দানা’ সব কিছু নিয়েই সরব বিরোধীরা। অভিযোগ সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে দাঙ্গা লাগাতে চান অনুব্রত। এমনকি কবি শঙখ ঘোষকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। কবি শঙখ ঘোষের ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য ছিল, কে শঙখ ঘোষ? রবি ঠাকুর, জীবনানন্দের নাম শুনেছি, এর নাম তো শুনিনি’। বিতর্কিত এই সমস্ত মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই স্যোশাল মিডিয়াতেও চরম ভাইরাল তাঁর বেশ কিছু মন্তব্য। তাঁর ‘শুঁটিয়ে লাল করে দেব, নোংরামি বার করে দেব’, ‘আহা সোনাগো আমার, খুব কষ্ট হচ্ছে বলো, কিংবা ‘মুখটাই কেমন বাঁকাপারা, ভাল্লাগে না’ ইত্যাদি মন্তব্য ঝড় তুলেছিল স্যোশাল মিডিয়ায়।

অনুব্রত জানিয়েছেন, ‘রাজ্য থেকে সিপিএমকে হটানোই আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাপোর্টে তা করতে পেরেছি। বিজেপিও ফিনিস। রাজনৈতিক জীবনে আমার সবচেয়ে বড় পাওনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গ’।

khela hobe

ইতিমধ্যেই ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার ঘটনায় বিজেপি নেতাকে খুনের অভিযোগে তাঁকে নোটিস ধরিয়ে একাধিকবার তলব করেছে সিবিআই। এছাড়াও তাঁর নামে ঝুলছে একাধিক মামলা। তাহলে ‘স্বচ্ছ’ রাজনীতির কথা ঠিক কতখানি খাটে তাঁর মুখে? যদিও সমস্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর সেই একই উত্তর, ‘সব ফলস, মিছে কথা’। যদিও তাঁর এই সাফাই নিয়েও বিরোধী মহলে উঠছে বিস্তর প্রশ্ন। তৃণমূল নেতার জীবনী প্রকাশকে কেন্দ্র করেও সমালোচনার ঝড় রাজ্যজুড়েই। তবে চেনা স্টাইলেই সেসবে কান দিতে নারাজ অনুব্রত মন্ডল।


Katha Bhattacharyya

সম্পর্কিত খবর