বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে যখন আমেরিকা সহ গোটা ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়ার সঙ্গে সমস্ত বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে, সেই মুহুর্তে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল কেনা নিয়ে প্রথম থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ করতে দেখা যায় আমেরিকাকে। এমনকি নিজেদের প্রতিনিধি পাঠিয়েও এই কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে তা সত্ত্বেও ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেনি আর এবার বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কড়া জবাব দিলেন আমেরিকাকে।
বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এদিন বলেন, “এবার থেকে আমরা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ দেখব। বিশ্বকে তুষ্ট করার কোনরকম চেষ্টা আমাদের দ্বারা হবে না।”
রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে এর আগেও একাধিক বার রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য ভারতকে উপদেশ দেয় আমেরিকা। সম্প্রতি দিল্লি এবং রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার মাঝেই পেন্টাগন বলে, “ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের প্রতি আমরা বলতে চাই যে, সামরিক ক্ষেত্রে আমরা কোনো দেশেরই রাশিয়ার প্রতি নির্ভরযোগ্যতা দেখতে চাইবো না। এহেন পদক্ষেপ যেন ভবিষ্যতে নেওয়া না হয়। আর এর পরেই এদিন জয়শঙ্করের মন্তব্য স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ভারত আমেরিকারই চোখ রাঙানির তোয়াক্কা করে না।
আমেরিকার এমন মনোভাবের মাঝেই দুই সপ্তাহ পূর্বে আমেরিকার বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন জয়শঙ্কর। বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন বিদেশসচিব জানান যে, প্রত্যেক দেশকেই তাদের পক্ষ থেকে আর্জি জানানো হয়েছে যেন কেউ রাশিয়ার থেকে কোনরকম জিনিস না কেনে। এরপর রাশিয়া থেকে ভারতের তেল কেনা প্রসঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, “ভারত এবং রাশিয়ার সম্পর্ক বহুদিনের। তবে বর্তমানে আমেরিকা তার মিত্র দেশগুলোকে এই অনুরোধ জানিয়েছে যে, রাশিয়া থেকে কোনরকম জ্বালানি যেন না কেনা হয়।”
এরপর জয়শঙ্কর জানান, “ভারত এক মাসে রাশিয়ার থেকে যে পরিমাণ তেল আমদানি করে, ইউরোপের দেশগুলো এক দিনে তার থেকেও বেশি পরিমাণ তেল কেনে তাদের থেকে। আর রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিসংখ্যান যদি দেখা যায়, তাহলে আমি আমেরিকাকে ইউরোপের দেশগুলোর দিকেই নজর দিতে বলব।” আর এরপরেই নিজেদের স্বার্থ দেখার প্রসঙ্গে তাঁর এই মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, “দেশের স্বার্থ আমাদের কাছে সবার আগে এবং এই কারণে আমরা যেকোনো পদক্ষেপই নিতে পারি। ভারতের স্বার্থ এবং নিরাপত্তা রক্ষা করা সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য। দেশের স্বার্থ সবকিছুর উপরে। যদি কম দামে তেল পাওয়া যায়, তাহলে আমরা কিনবো না কেন? দেশের মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী তাই আমরা তেল আমদানি করা শুরু করেছি আর ভবিষ্যতেও করব।”