বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারত মূলত একটি কৃষিপ্রধান দেশ। পাশাপাশি, দেশের প্রতিটি প্রান্তেই বিপুল পরিমাণে কৃষিকার্য পরিলক্ষিত হয়। এমনকি, আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ পেশাগত দিক থেকেও সম্পূর্ণভাবে চাষাবাদের ওপর নির্ভরশীল। তবে, বর্তমানে কিছু কিছু কৃষক প্রথাগতভাবে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পথে না হেঁটে বিকল্প কিছু প্রয়োজনীয় চাষের প্রতিও আকৃষ্ট হচ্ছেন।
পাশাপাশি, সেগুলিতে মিলছে বিরাট লাভও। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অন্যান্য কৃষকরাও এই চাষ সম্পর্কে বিশদে জানতেও পারছেন। বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা ঠিক সেইরকমই একজন কৃষকের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি একটি বিদেশি ফল চাষ করেই বর্তমানে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করছেন। মূলত, হিমাচল প্রদেশের সিরমৌরের কৃষক নরেন্দ্র সিং পানওয়ার কিউই ফল চাষ করেই বিরাট সফলতা পেয়েছেন। এমনকি, তিনি বছরে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।
তিনি কিভাবে শুরু করলেন কিউই চাষ?
নরেন্দ্র সিং পানওয়ার ১৯৯৩ সালে প্রথমবারের মতো কিউই গাছ দেখেছিলেন। তারপরেই তিনি চেয়েছিলেন এই ফলের চাষ করতে। এরপরে কিউই গাছের চারা রোপণ ও চাষের জন্য তিনি ওয়াইএস হর্টিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত ডঃ ধরমপাল শর্মার সাহায্য নেন। তাঁর কাছ থেকেই নরেন্দ্র সিং পানওয়ার এই সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে শুরু করে দেন কিউই ফলের চাষ। এক্কেবারে প্রথমে তিনি ১৭০ টি কিউই গাছ কিনে তাঁর জমিতে বপণ করেছিলেন। আর এইভাবে সিরমৌর জেলায় প্রথম কিউই বাগান শুরু হয়েছিল।
কিউই চাষে শীর্ষে রয়েছে সিরমৌর জেলা:
নরেন্দ্র সিং পানওয়ার এই চাষ শুরু করার পরেই তাঁকে দেখে হিমাচলের বহু কৃষক এই ফলের চাষ শুরু করে দেন। মূলত, ভারতে, Hayward প্রজাতির কিউই সর্বাধিক এবং সর্বোত্তমভাবে চাষ করা যেতে পারে। পাশাপাশি, এই গাছগুলি ৪,০০০ থেকে ৬,০০০ ফুট উচ্চতায় ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে।
এই কারণেই কৃষকরা হিমাচলের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় এই জাতের কিউই চাষ করছেন। এমনকি, এখন এই চাষ এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, সিরমৌর জেলার কৃষকরা নিউজিল্যান্ডকেও এই ফল চাষে হারিয়ে দিয়েছেন।
কিউই চাষে ভর্তুকি পাওয়া যায়:
উন্নত কিউই চাষের জন্য কৃষকদের ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ এবং ভর্তুকি দেওয়ার মতো সুবিধাও প্রদান করা হয়। নরেন্দ্র সিং পানওয়ার ২০১৯ সালে উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৪ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, এই ঋণে তাঁকে ২ লক্ষ টাকা ভর্তুকিও দেওয়া হয়।
এদিকে, বর্তমানে সারা বছর কিউই উৎপাদন করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় সেগুলি বিক্রি করে নরেন্দ্র সিং পানওয়ার খুব সহজেই বছরে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান প্রতি কেজি কিউই বিক্রি করে ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা পাওয়া যায়। পাশাপাশি, এখন তাঁর বাগানে ১৩০ কুইন্টালেরও বেশি কিউই উৎপাদিত হয়।
এছাড়াও, তিনি আরও জানান, কিউই চাষের জন্য ঠাণ্ডা আবহাওয়া যথেষ্ট নয়। বরং, এই চাষের ক্ষেত্রে কৃষককে অত্যন্ত যত্নশীল হতে হয়। এছাড়াও, এই চাষে সেচের প্রয়োজন থাকায় বাগানে নিয়মিত জল দেওয়া জরুরি। শুধু তাই নয়, কিউই গাছে ভারী এবং বড় ফল ধরে। যার কারণে সেগুলিতে পোকামাকড়ের আক্রমণেরও একটা ঝুঁকি থাকে।
এদিকে, পার্বত্য অঞ্চলে কিউই চাষ সেখানে বসবাসকারী মানুষ ও কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে প্রভূত সাহায্য করেছে। কারণ ওই এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই কম। শুধু তাই নয়, এখন বিভিন্ন রাজ্য থেকে কৃষকরা কিউই বাগান দেখতে সিরমৌরে আসেন এবং সেখানকার কৃষকদের কাছ থেকে এই চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণও পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জেনে নেন তাঁরা।