বাংলা হান্ট ডেস্ক: শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাতে আমরা সাধারণত চক-ডাস্টার-বই দেখতেই অভ্যস্ত। ক্লাসে এসে এগুলির সাহায্যেই পড়ুয়াদের পড়াতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু, শিক্ষিকা হওয়া সত্বেও স্কুলে এসে দিনের পর দিন ঝাড়ুদারের কাজ করতে আপনারা কি কখনও কাউকে দেখেছেন? হ্যাঁ, শুনতে অদ্ভুত এবং অবিশ্বাস্য মনে হলেও কেরালায় ঠিক এই ঘটনাই ঘটেছে বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষিকার সাথে।
জীবনের অধিকাংশ সময়ে গর্বের সাথে শিক্ষকতা করে আজ তাঁরা এক লহমায় হয়ে গিয়েছেন ঝাড়ুদার! এমনকি, এই ঘটনা তাঁদের কাছেও কার্যত অবিশ্বাস্য। কিন্তু, এভাবেই শিক্ষকতার কাজ হারিয়ে দিনের পর দিন ঝাড়ুদারের কাজ করছেন তাঁরা। আর সেই তালিকায় রয়েছেন কেরলের তিরুবনন্তপুরমের বাসিন্দা তথা জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষিকা উষা কুমারীও।
ঘটনাটি ঠিক কি?
জানা গিয়েছে যে, মাস দুয়েক আগেও শিক্ষিকা হিসেবে নিজের কাজ সামলেছেন বছর চুয়ান্নের উষা। কিন্তু, গত ৩১ মার্চ থেকে কার্যত তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, এক ধাক্কায় পাল্টে গিয়েছে তাঁর পেশা এবং পরিচিতি। কারণ, বিগত দু’মাস ধরে তিনি হারিয়েছেন শিক্ষিকার পদ। বদলে জুটেছে ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ।
এমনকি, উষার পাশাপাশি, আরও ৩৪৪ জন শিক্ষকও কাজ হারিয়েছেন। জানা গিয়েছে তাঁরা সকলেই এমজিএলসি-র শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিলেন। কিন্তু, সরকার ওই সেন্টারগুলি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এমতাবস্থায়, তাঁদের মধ্যে ৫০ জন গত বুধবার থেকে ঝাড়ুদারের কাজ শুরু করেছেন। উষাও তাঁদের মধ্যে একজন। তবে, শুধু উষাই নন, তাঁর মতো আরও ১৪ জনকে তিরুবনন্তপুরমের বিভিন্ন সরকারি স্কুলে ঝাড়ুদারের কাজ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, তাঁরা প্রত্যেকেই এমজিএলসি-র বিভিন্ন কেন্দ্রে দু’মাস আগেও শিক্ষকতার কাজে যুক্ত ছিলেন।
এদিকে, শিক্ষকতার কাজ হারিয়ে উষা জানিয়েছেন, “দু’মাস আগেও কুন্নাথুমালায় উপজাতি সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েদের আমি পড়াতাম। কিন্তু আজ আমার হাতে চক, ডাস্টারের বদলে উঠে এসেছে ঝাড়ু। হয়তো এটাই আমার ভাগ্য!” পাশাপাশি, তিনি আরও বলেন যে, “আমার সন্তানেরা ঝাড়ুদারের এই কাজটি নিতে বারণ করেছিল। কিন্তু আমি কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না। সেজন্যই নিজে কিছু করতে চাই। রাজ্য সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, আমাদের পেনশনের পুরো টাকাটা যেন পাই। আর পদটাও যেন পরিবর্তন করা হয়।”
যদিও, কোথাও যেন চাপা একটা আক্ষেপ থেকেই গিয়েছে। দীর্ঘদিন শিক্ষকতার পরে এহেন পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি জানান, “২৩ বছর শিক্ষকতার পেশায় ছিলাম। এখন আমি আগামী ছ’বছরের জন্য ঝাড়ুদার হয়ে রইলাম।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উষা তাঁর শিক্ষকতার জীবনে পেয়েছেন এক ডজনেরও বেশি রাজ্য পুরস্কার। এমনকি, জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। প্রত্যন্ত আদিবাসী শিক্ষাকেন্দ্রে পড়ানোর জন্য প্রতিদিন প্রায় ১৪ কিলোমিটার পাহাড়ি পথে হেঁটে, যাতায়াত করতে হত তাঁকে।