করতে হবে মায়ের স্বপ্নপূরণ! বাড়িতে বাবার কাছে জন্মদাত্রীর মৃতদেহ রেখে জয়েন্ট দিয়ে প্রথম হলেন ছেলে

বাংলা হান্ট ডেস্ক: একজন সন্তানের কাছে তাঁর মাতৃবিয়োগের থেকে বড় যন্ত্রণা আর কিছু হতেই পারে না। এমতাবস্থায়, মা না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেও তাঁর স্বপ্নকে সম্মান জানিয়ে তা পূরণ করলেন ছেলে। শুধু তাই নয়, সকালেই মায়ের মৃত্যুর পর বুকে পাথর চেপে মায়ের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে জয়েন্টের পরীক্ষায় বসেছিলেন এই কিশোর। আর সেখানেই তিনি হাসিল করেছেন বিরাট সাফল্য। এমনকি, সমগ্ৰ তেলেঙ্গানায় (Telangana) জয়েন্ট পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন আভুলা দুর্গাপ্রসাদ নামের ওই পড়ুয়া।

যদিও, আক্ষেপ একটাই। তাঁর মা দেখে যেতে পারলেন না ছেলের এই সাফল্য। তবে, পরীক্ষায় সফল হয়ে মায়ের স্বপ্নপূরণ করলেন তিনি। জানা গিয়েছে যে, জয়েন্ট পরীক্ষার সকালেই মারা যান আভুলার মা। এমতাবস্থায়, কোনোমতে নিজেকে সামলে পরীক্ষা দিতে যান তিনি। তবে, তাঁর লক্ষ্য ছিল একটাই, মায়ের ইচ্ছেপূরণ করা। আর সেই কারণেই সমস্ত কষ্ট বুকে চেপে পরীক্ষা শেষ করেন আভুলা। এদিকে, ছেলে ফেরার অপেক্ষায় বাড়িতে স্ত্রীর দেহ আগলে বসেছিলেন আভুলার বাবা মোহন রেড্ডি।

   

তাই, কোনোমতে পরীক্ষা শেষ করেই দ্রুত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন সদ্য মাতৃহারা আভুলা। আর তিনি পৌঁছতেই সম্পন্ন হয় তাঁর মায়ের শেষকৃত্য। জানা গিয়েছে, আভুলার মা নরসম্মা ছিলেন দৃষ্টিহীন। পাশাপাশি, তাঁর বাবা চাষাবাদ করেই সংসার চালান। আভুলারা মোট দুই ভাই। এমতাবস্থায়, সামান্য উপার্জনের মধ্য দিয়েই দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ সামলাচ্ছেন বাবা মোহন রেড্ডি।

শুধু তাই নয়, ছেলেদের পড়াশোনার অসুবিধা যাতে না ঘটে সেজন্য, তাঁরা গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকেও চলে আসেন। সর্বোপরি, পরীক্ষায় প্রস্তুতির জন্য টাকার অভাবে কোনো কোচিং নিতে পারেননি আভুলা। তবুও, আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে দিয়েই তিনি নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। এমতাবস্থায়, ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী আভুলাকে ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন তাঁর মা।

কিন্তু, ক্রমশ অসুস্থতার কারণে শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে আভুলার মায়ের। এমনকি, জয়েন্টের পরীক্ষার দিনই তিনি অমৃতলোকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এদিকে, এক দিকে মায়ের মৃত্যু, অন্য দিকে মায়ের ইচ্ছেপূরণের দোটানায় আভুলা মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই অগ্রসর হন। জানা গিয়েছে, জয়েন্ট মেনের পরীক্ষায় ৯৬.৪৮ শতাংশ পেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, আভুলা পরবর্তীকালে আইএএস অফিসার হতে চান। সর্বোপরি, পরীক্ষায় প্ৰথম হয়ে এই সাফল্য আভুলা তাঁর মাকে উৎস্বর্গ করেছেন। এদিকে, আভুলার এই খবর সামনে আসতেই তাঁকে একবাক্যে কুর্ণিশ জানানোর পাশাপাশি, তাঁর পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন সকলে।

Sayak Panda
Sayak Panda

সায়ক পন্ডা, মেদিনীপুর কলেজ (অটোনমাস) থেকে মাস কমিউনিকেশন এবং সাংবাদিকতার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স করার পর শুরু নিয়মিত লেখালেখি। ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলা হান্ট-এর কনটেন্ট রাইটার হিসেবে নিযুক্ত।

সম্পর্কিত খবর