বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: কমনওয়েলথ গেমসে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করছেন ভারতীয় ভারোত্তোলকরা। এখনো অবধি যে ৬ টি পদক এসছে আপাতত সবই ভারোত্তোলন থেকে। তবে ষষ্ঠ যে পদকটি পেলো ভারত তা বাংলার ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে কিছুটা বিশেষ। ২০২২ কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম কোনও পদক পেলেন একজন বাঙালি ক্রীড়াবিদ। আর রৌপ্য বা ব্রোঞ্জ নয়, একেবারে স্বর্ণপদকই এনেছেন বাংলার অচিন্ত্য শিউলি।
মীরাবাঈ চানুর মত অচিন্ত্যও রেকর্ড গড়ে সোনা এনে দেন ভারতকে। ভারতীয় সময় গভীর রাতেও ক্রীড়া অনুরাগীরা তার পারফরম্যান্সের দিকে চোখ রেখেছিল। প্রথমেই স্ন্যাচে তিনি ১৪৩ কেজি ওজন তোলেন যা ৭৩কেজি বিভাগে কমনওয়েলথ রেকর্ড। এরপর ক্লিন এন্ড জার্কে তিনি তুলেছেন ১৭০ কেজি। দুটি মিলিয়ে তিনি মোট ৩১৩ কেজি ওজন তুলেছেন। এটিও একটি কমনওয়েলথ রেকর্ড।
অচিন্ত্যর জন্ম হাওড়া জেলায় দেওলপুরে। ছোটবেলাটা তার খুব একটা সুখের ছিল না। তার বাবা ছিলেন একজন রিকশাচালক। মাঝেমধ্যে শ্রমিকের কাজ করেও পয়সা রোজগার করতেন। নিজের ১২ বছর বয়সে ভারোত্তোলনের সঙ্গে পরিচয় হয় অচিন্ত্যর। তার আগে মাত্র ৮ বছর বয়সে নিজের বাবাকে হারিয়েছিলেন তিনি। এরপর পরিবার চালাতে নিজের মা ও ভাইয়ের সাথে দর্জির কাজ করতে শুরু করেন অচিন্ত্য। তবে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যেও অচিন্ত্য নিজের অনুশীলন বন্ধ করতে চাননি। পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি তিনি সমানভাবে অনুশীলন চালিয়ে গিয়েছেন। এরপরে নিজের চেষ্টায় আর্মিতে যোগদান অচিন্ত্য। কিন্তু অনুশীলনের সময় কমে যাওয়ায় সেই কাজ ছেড়ে দিতে দুবার ভাবেননি তিনি। সেই সময় তার পরিবারের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে উঠেছিল। তখন তাদের পাশে দাঁড়ান অচিন্ত্যর প্রশিক্ষক অস্তম দাস। অচিন্ত্য এরপর কিছুটা স্বস্তি পেয়ে নিজের কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যান। অল্পের জন্য ২০২০ অলিম্পিকে তিনি যোগ্যতা অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু এরপর ২০২১ জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রুপো যেতেন আর এবার মাত্র ২০ বছর বয়সে কমনওয়েলথ গেমস ২০২২-এ ভারতের হয়ে তৃতীয় স্বর্ণপদক জিতলেন তিনি।
তার ভাই অলোক শিউলি জানিয়েছেন স্কুলে পড়ার সময় তিনি ও তার দাদা দুজনেই একসাথে অনুশীলন করতেন। কিন্ত তার মধ্যে তার দাদার মতো প্রতিভা ছিল না। অচিন্ত্য স্কুলে যাওয়ার আগে সকাল ৯ টা থেকে ১০ টা অবধি অনুশীলন করতেন। তার পরিবারের দুর্গতি একমাত্র ভারোত্তোলনই দূর করতে পারে, এই ধারণা মাথায় রেখে পাগলের মত পরিশ্রম করতেন তিনি। ২০১৪ সালে আর্মি স্পোটর্স ইনস্টিটিউটের কোচেদের নজরে পড়ে যান তিনি এবং তাকে ট্রায়ালে ডাকা হয়। তারপর থেকে পেছন ফিরে দেখেননি অচিন্ত্য। তার ছোটবেলার প্রশিক্ষক অস্তম দাস জানিয়েছেন যখন প্রথমবার তিনি অচিন্ত্যকে দেখেছিলেন তখন তাকে দেখে কোনভাবেই মনে হয়নি যে তিনি একদিন ভবিষ্যতে ভারোত্তোলক হবেন। যদিও তার মধ্যে একটি জেদ ছিল এবং হাবেভাবে অত্যন্ত গতিশীলতা লক্ষ্য করেছিলেন অস্তম, যা যে কোন ক্ষেত্রের ক্রীড়াবিদের কাছে প্রযোজ্য।