কলেজ জীবনের ছবি দিয়ে জমি কেনা! পার্থর পরিচিত দেখে অবাক ইডি আধিকারিকরা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সম্প্রতি, এসএসসি (SSC) মামলায় ইডির (ED) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অভিনেত্রী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় (Arpita Mukherjee)। অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে ইতিমধ্যেই ৫০ কোটি নগদ অর্থ এবং একাধিক সোনা গয়না উদ্ধার করেছে ইডি। এরপরেই এসএসসি দুর্নীতির সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকার সন্দেহে গ্রেফতার করা হয় দুজনকেই। পরবর্তী সময়ে একের পর এক নয়া তথ্য উঠে এসেছে ইডির হাতে, যা অবাক করে তুলেছে সকলকে।

সম্প্রতি, বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে পার্থ-অর্পিতার নামে একাধিক জমি সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। শুধুমাত্র শান্তিনিকেতনেই একাধিক জমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সেরকম একটি সম্পত্তির দলিল ঘিরেই বর্তমানে শুরু হয়েছে বিস্তর জল্পনা। কিন্তু কেন?

আসলে যে কোন দলিলেই সাম্প্রতিক কালের ছবি দেওয়ার নিয়ম জারি করা হয়, যার দ্বারা খুব সহজেই সম্পত্তির মালিককে চিনে নেওয়া সম্ভব হয়। তবে বর্তমানে শান্তিনিকেতনে শ্যামবাটি মৌজার ফুলডাঙায় একটি জমির দলিল দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে ইডি অফিসাররা। এটি পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতার নামে থাকলেও এ দলিলে পার্থের যে ছবিটি দেওয়া হয়েছে, তা বহুকাল আগের। ইডির অনুমান, সম্ভবত ৩৫ থেকে ৪০ বছর অতীতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কলেজ জীবনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে ওই দলিলে। শুধু তাই নয়, একইসঙ্গে প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস মহাসচিবের সই ঘিরেও দেখা গিয়েছে একাধিক সংশয়। ফলে সবমিলিয়ে উক্ত দলিলটি ঘিরে উঠে গিয়েছে একাধিক প্রশ্ন চিহ্ন।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অনুমান, নিজের পরিচিতি সকলের থেকে লুকানোর জন্যই কলেজ জীবনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট কোন ধারনা না মিললেও অপরদিকে আবার পার্থের সই নিয়েও তদন্তে নেমেছে তারা। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে পার্থ-অর্পিতার নামে একটি জমি ক্রয় করা হয়। সেখানে পার্থ এবং অর্পিতা ছাড়াও উত্তর কলকাতার দুই বাসিন্দার পরিচয় ব্যবহার করা হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। এক্ষেত্রে বাকিদের সই এবং আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট হলেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরিচয় পত্রে কেন এত গোলযোগ, সেটাই চিন্তায় ফেলেছে ED-কে।

তবে ২০১২ সালে উক্ত জমিটি ক্রয় করার মধ্যে দিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে। প্রথমত, ইডির জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান যে, তাঁর সঙ্গে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক বেশি দিনের নয়। তবে এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে, তাহলে ২০১২ সালে কিভাবে যৌথভাবে জমি কিনলেন তারা। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালের পরবর্তী সময়ে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের নামে মিউটেশন করা হয় বলেও জানা গিয়েছে। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই অনুমান করা হচ্ছে, নিজের পরিচিতি লুকানোর জন্যই অতীতের ছবি ব্যবহার করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

দলিল ইস্যুতে অবশ্য আরো বেশ কয়েকটি বিষয় চিন্তায় রেখেছে অফিসারদের। এক্ষেত্রে পার্থ-অর্পিতা ছাড়াও ওপর দুই ব্যক্তির মধ্যে একজনের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে ‘আলিপুর পুলিশ কোর্ট’। এক্ষেত্রে প্রথমে ওই ব্যক্তিকে আইনজীবী বলে মনে করা হলেও এক্ষেত্রে সেরকম কোন পরিচয় পত্র মেলেনি। একইসঙ্গে পুরাতন ছবি থেকে শুরু করে সই এবং আঙ্গুলের ছাপের মতো একাধিক বিষয় কিভাবে ভূমি রাজস্ব অফিসারদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল, তা যথেষ্ট সংশয়ের বিষয়।

Untitled design 64 3

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে বাংলায় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফলে এক্ষেত্রে কি কেবলমাত্র ‘প্রভাবশালী’ নেতা হওয়ার কারণে ছাড় পেয়েছিলেন তিনি, নাকি এর পিছনে আরও নতুন কোন রহস্য রয়েছে, তা খুঁজে বের করতে বদ্ধপরিকর ইডি।


Sayan Das

সম্পর্কিত খবর